সোমবার   ০৪ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২০ ১৪৩২   ০৯ সফর ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮

আবদুল কাদেরের অভিযোগের জবাব দিলেন সাদিক কায়েম

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২৫  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনে অংশ নিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যরা নিজেদের ছাত্রলীগ হিসেবে প্রমাণ করতে চেষ্টারত ছিল— এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। ৫ আগস্টের পর ‘গুপ্ত শিবিরের’ এসব নেতারা প্রকাশ্য রাজনীতি করছেন বলেও অভিযোগ তার। একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পর তৎকালীন ঢাবি শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম ছাত্রলীগে থাকা কয়েকজন শিবির নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা না করতে সুপারিশ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আবদুল কাদের।

গতকাল রবিবার রাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে এসব অভিযোগ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের।

তবে এসব অভিযোগ খণ্ডন করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক এবং ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি মো. আবু সাদিক কায়েম (সাদিক কায়েম)। সবকিছু স্পষ্ট করে মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন তিনি।

পাঠকদের জন্য সাদিক কায়েমের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

১. বিপ্লবের পর দুইটি কনসার্ন ছিল। প্রথমটি ছিল অপরাধের বিচার।

দ্বিতীয়টি ছিল বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া। সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানান যে, ‘তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশবশত মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।’ স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ— তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্যগুলো ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ভেরিফাই করাটা জরুরি ছিল। তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে আমি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের এক সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি অধিকতর তদন্তের জন্য।

তাদেরকে বলেছি, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না— এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।

২. এনসিপি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই সেসময় এরকম বিভিন্ন সুপারিশ পেয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন ভেরিফাই করার জন্য। আবদুল কাদের নিজেই উল্লেখ করেছেন, মামলার তালিকাগুলো আমরা পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করেছি। এখন, নিজেদের মধ্যে কথা না বললে কীভাবে জানব— আসলে কেউ অপরাধী, নাকি তাকে হয়রানি করা হচ্ছে?

৩. স্ক্রিনশটে যাদের নাম যুক্ত আছে, তারা কেউই শিবিরের কেউ না। ৫ আগস্টের পর থেকেও তারা শিবিরের কোনো পদে বা কর্মসূচিতে ছিলেন না।


ফলে ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
৪. সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে আমি নাকি বিভিন্ন জায়গায় কল করেছি—এটাও একটি মিথ্যা। সাঈদী অপরাধী এবং তাকে বাঁচানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। 

৫. মুহসিন হলের একজনের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত শাহাদাতকে আমি চিনিই না। তাছাড়া, কাদের লিখেছে, ‘চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ওই পোস্টদাতার সাথে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।’ আচ্ছা, আমি যদি ফোন দিতেই চাইতাম, তাহলে তো সেটা মামলা হওয়ার আগেই দেওয়ার কথা ছিল। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেই পোস্টদাতাকে ফোন দেওয়ার কী দরকার।

এলাকায় থাকতে কোনো সময় শিবির করেছে, তামিরুল মিল্লাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবিরের কোনো আয়োজনে অংশ নিয়েছে, শিবিরের নেতা হিসেবে বা শিবির কানেকশন ব্যবহার করে জুলাইয়ের বড় নেতাও হয়েছে— কিন্তু এখন উগ্র শিবিরবিদ্বেষী— এমন মানুষের সংখ্যাও কম না।

যদি জীবনের কোনো এক ধাপে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, পরবর্তী সময় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরবিরোধী ভূমিকা নেয় অথবা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়— এবং এমন নরপশুদের কর্তৃক ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা নিয়মিত ভিক্টিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার যদি শিবিরকে নিতে হয়, তাহলে শিবির ছেড়ে বাগছাস-এনসিপিতে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের কৃতিত্ব, দুর্নীতিসহ অন্যান্য নেতিবাচক ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায়ভারও তো শিবিরকে নিতে হবে। সেটা কি যৌক্তিক হবে?

ওই পোস্টের কমেন্টে সাদিক কায়েম নিজেই উল্লেখ করেন- কাদের যে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করেছেন সেই চ্যাট আবদুল কাদেরের সঙ্গে হয়নি। তা হয়েছে এনসিপির অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে। আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে হওয়া চ্যাটের স্ক্রিনশট আবদুল কাদেরের মাধ্যমে অপব্যাখ্যা সহকারে পাবলিকলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার মাধ্যমে ঘৃণ্যতম সংস্কৃতির সূচনা হলো।

এভাবে ব্যক্তিগত ফায়দা নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আলাপ বা প্রাইভেট ইনফরমেশন সামনে আনার সংস্কৃতি তৈরি হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অবিশ্বাস, অনাস্থার সৃষ্টি হবে। যা দীর্ঘ মেয়াদে গোটা জাতির জন্যই ক্ষতি বয়ে আনবে। তাছাড়া স্ক্রিনশট পলিটিক্স শুরু হলে এনসিপি-বাগছাসে থেকে দিনরাত শিবির ব্যাশিং করা অনেকেরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নাই হয়ে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর