বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২৫ ১৪৩১   ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৫

সাহায্য পেতে যে নামাজ পড়বেন

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

মানুষকে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব।

তাই নিতে যাওয়া সিদ্ধান্তটি সঠিক না বেঠিক- এটা মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। সিদ্ধান্তের প্রকারভেদে স্বস্তি ও অস্বস্তি হয়। আবার সিদ্ধান্তকৃত কাজটি করতে গিয়ে মানুষ সহজতা ও সাহায্যও কামনা করে। চাই কাজটি গৌণ হোক কিংবা বৃহৎ। এটি পৃথিবীর মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক নিয়ম।
মানুষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে ও কোন সিদ্ধান্ত তার জন্য কল্যাণকর হবে এবং কীভাবে বিষয় নির্বাচন করবে- এ ব্যাপারে ইসলামের সুন্দর দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সহজতা ও সাহায্য লাভে ধন্য হয়।

এ জন্য রাসুল (সা.) ‘ইস্তেখারা’র নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।  
ইস্তেখারা বিষয়টি কী এবং ইস্তেখারার নামাজ পড়ার পদ্ধতি কী- এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, ইস্তিখারা করা মানে কোনো বিষয় বাছাই ও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়া। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় বাছাই করে নিতে হবে, সে যেন উত্তমটি বাছাই করে নিতে পারে, সে প্রার্থনা করা।

ইস্তিখারার নামাযের দোয়া জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের সব বিষয়ে ইস্তিখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন।  

তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর বলে,
 اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ ثم تسميه بعينه خَيْرا لِي في عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ قال أو فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لي ثُمَّ بَارِكْ لي فِيهِ، اللهم وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّه شَرٌّ لي في ديني وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ في عَاجِلِ أمري وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْنِي عَنْهُ [واصْرِفْهُ عَنِّى]، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رضِّنِي به،
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত।

হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।  

হে আল্লাহ্! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং  ৬৮৪১, তিরমিজি, হাদিস নং  ৬৪৮)।

ইবনে আবু জামরা (রহ.) বলেন, ইস্তিখারার গণ্ডি শুধু ‘মুবাহ’ (করলে অসুবিধা নেই) বিষয়ের ক্ষেত্রে এবং এমন মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, যে মুস্তাহাব অপর একটি মুস্তাহাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক; সুতরাং দুইটির কোনটি আগে পালন করবে কিংবা কোনটি বাদ দিয়ে কোনটি পালন করবে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য ইস্তেখারা বড় ছোট সকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ অনেক ছোটখাটো বিষয়ের ওপর অনেক বড় বিষয়ও নির্ভর করে থাকে।

ইবনে আবু জামরা (রহ.) আরো বলেন, ইস্তিখারার দোয়ার আগে নামাজ পড়ার রহস্য হল, ইস্তিখারার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একসঙ্গে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করা। আর এটি পেতে হলে রাজাধিরাজ মহান আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়া প্রয়োজন। আল্লাহ্র প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার স্তুতি জ্ঞাপন ও তার কাছে ধর্ণা দেওয়ার ক্ষেত্রে নামাযের চেয়ে কার্যকর ও সফল আর কিছু নেই। মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহকে বলা আপনি আমার জন্য সেটা সহজ করে দেন।

মোদ্দাকথা, যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আল্লাহর সাহায্য পেতে এবং কল্যাণকর কাজ নির্বাচন করতে ইস্তেখারার নামাজ পড়তে হয়। এ নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে উল্লিখিত দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সহজতা প্রার্থনা করা।