শুক্রবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩২   ০৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৩

পথ হারিয়ে ফেলা সেই ইয়ামিই

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৫  

চেনা ফ্রেমে তাঁকে প্রথম দেখা গিয়েছিল টেলিভিশনে। ধারাবাহিক ‘চাঁদ কে পার চলো’–এর সেই শান্ত, সহজ মুখটাই ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠেছিল ঘরে ঘরে। তখন কেউ হয়তো ভাবেননি, সেই মেয়ে একদিন বলিউডের গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্রগুলোর একটিতে নিজেকে স্থায়ী করে নেবেন। আজ ইয়ামি গৌতমের জন্মদিনে ফিরে তাকানো যাক তাঁর অভিনয়জীবনের পথচলার দিকে—যে পথ শুধু সাফল্যের নয়, ভেতরের দ্বিধা, ভাঙন আর নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার গল্পও বটে।

টেলিভিশন থেকে বড় পর্দা
টেলিভিশনে কাজের মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু হলেও ইয়ামির স্বপ্ন ছিল বড় পর্দা। ধারাবাহিক ও বিজ্ঞাপনচিত্রের পরিচিত পরিসর পেরিয়ে তিনি যখন সিনেমার দিকে এগোলেন, শুরুটা কিন্তু হিন্দি ছবি দিয়ে নয়। তাঁর প্রথম বড় পর্দার অভিজ্ঞতা কন্নড় ছবিতে। ভাষা, সংস্কৃতি—সব মিলিয়ে সেই শুরুটা সহজ ছিল না। তবে লড়াইয়ের মধ্যেই তৈরি হচ্ছিল প্রস্তুতি।

২০১২ সালে সুজিত সরকারের ‘ভিকি ডোনার’ দিয়ে হিন্দি ছবিতে তাঁর আগমন। আয়ুষ্মান খুরানার বিপরীতে সেই ছবিতে ইয়ামিকে দেখা গেল সাবলীল, সংযত অথচ দৃঢ় এক নারীর ভূমিকায়। ছবির সাফল্য তাঁকে রাতারাতি পরিচিত করে দেয়; কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু হয় আরেক রকম সংগ্রাম।

প্রথম বড় সাফল্যের পর ইয়ামি নিজেই স্বীকার করেছেন এক অদ্ভুত মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছিল নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। বুঝতে পারছিলাম না, কোন পথে যাব।’ সফলতার পরপরই কাজের ঝাঁপটা, প্রত্যাশার চাপ—সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। অভিনয় করবেন, নাকি সেই সফলতার সুযোগকে অন্যভাবে ব্যবহার করবেন—নিজের কাছেই প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন।

এই সময়টা তাঁর কাছে ছিল নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ার। কেন তিনি নিজের শহর ছেড়ে মুম্বাই এসেছিলেন, অভিনয়ের উদ্দেশ্যই বা কী—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিলেন। সময় লেগেছে; কিন্তু সেই থেমে যাওয়ার মধ্যেই তৈরি হয়েছেন পরিণত ইয়ামি।


হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে জন্ম ইয়ামির। বেড়ে ওঠা চণ্ডীগড়ে, এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তিনি নিজেই বলেছেন, স্কুলে থাকার সময় মঞ্চে উঠতে ভয় পেতেন। কবিতা আবৃত্তি তো দূরের কথা, অনেক মানুষের সামনে দাঁড়ালেই ঘাবড়ে যেতেন। আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল স্পষ্ট। অথচ পড়াশোনায় ছিলেন ভালো।
সময়ের সঙ্গে সেই ভয় কাটতে শুরু করে। সিনেমা দেখার পর প্রিয় দৃশ্যগুলো তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতেন—নীরবে, একান্তে। সেখান থেকেই হয়তো ধীরে ধীরে তৈরি হয় ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাসী ইয়ামি গৌতম।

পরিণত অভিনয়ের দিকে যাত্রা
‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, ‘বালা’, ‘থার্সডে’—এই ছবিগুলোর মাধ্যমে ইয়ামি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভিন্ন ভিন্ন রূপে। দেশপ্রেমের আবেগ, সামাজিক বক্তব্য কিংবা মনস্তাত্ত্বিক উত্তেজনা—সব জায়গাতেই তিনি ভরসাযোগ্য। হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কন্নড় ও পাঞ্জাবি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন। প্রায় ২৭টি সিনেমার ক্যারিয়ারে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে।
প্রচারবিমুখ হওয়াটাও ইয়ামির ব্যক্তিত্বের অংশ। তিনি মনে করেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষা তাঁকে মাটিতে পা রাখতে শিখিয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার চেয়ে কাজের মাধ্যমেই নিজেকে তুলে ধরতে চান তিনি।


২০২১ সালের জুনে হিমাচলের বাড়িতে ব্যক্তিগত আয়োজনে পরিচালক আদিত্য ধরকে বিয়ে করেন ইয়ামি। তাঁদের পরিচয় ও সম্পর্কের শুরু ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’–এর সেটে। দুই বছরের প্রেমের পর সেই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।

 ‘আর্টিকেল ৩৭০’ সিনেমায় ইয়ামি
‘আর্টিকেল ৩৭০’ সিনেমায় ইয়ামিছবি : এক্স থেকে
‘আর্টিকেল ৩৭০’–এ বন্দুক হাতে এনআইএ এজেন্টের চরিত্রে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন ইয়ামি। আর এবার সুপর্ণ ভার্মার ‘হক’ ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে বাস্তব ইতিহাসের এক সাহসী নারীর ভূমিকায়। ১৯৮৫ সালের ঐতিহাসিক সাহো বানু বেগম মামলাকে অবলম্বন করে নির্মিত ছবিতে ইয়ামি অভিনয় করেছেন সাহো বানুর চরিত্রে, আর তাঁর বিপরীতে আহমেদ খান হিসেবে আছেন ইমরান হাশমি। ছবিটি নভেম্বরেই মুক্তি পেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টেলিভিশনের সেই লাজুক মুখ থেকে আজকের সাহসী, পরিণত অভিনেত্রী—ইয়ামি গৌতমের এই উত্তরণ সহজ ছিল না। মঞ্চভীতি, আত্মবিশ্বাসের সংকট, সাফল্যের পর বিভ্রান্তি—সব পেরিয়ে তিনি আজ স্থির, সংযত ও নিজের জায়গায় আত্মবিশ্বাসী।
 

এই বিভাগের আরো খবর