শুক্রবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৩   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩০   ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৭৭

মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে ‘সুগন্ধি কালিজিরা ধান!

মোহাম্মদ ইদ্রিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩  

এ জাতের ধান সাধারণত কালো বর্ণের হয়। যা অন্য ধানের চেয়ে আকার অনেক ছোট। তাছাড়া অন্য জাতের ধান আবাদে বিঘা প্রতি যেখানে ২০-২২ মণ ধান পাওয়া, সেখানে এই সুগন্ধি ধান পাওয়া যাচ্ছে ৫-৭ মণ।  স্থানীয় বাজারে অন্য জাতের চাল প্রতি কেজি যেখানে ৬০-৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে সেখানে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকায়। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমনের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে ‘সুগন্ধি কালিজিরা’ ধান। এরইমধ্যে এই ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ফলন ও বাজার দর ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। এক সময় কালিজিরা ধান বেশ জনপ্রিয় ছিল। দীর্ঘ বছরের ব্যবধানে উফশী ও উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের ধান আবাদ করলেও সৌখিন কৃষকরা এ ধানকে আজো ধরে রেখেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলায় ৪ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ৭৮ হেক্টর জমিতে কালিজিরা ধান আবাদ করা হয়। যা গত বছর থেকে ৩০ হেক্টর বেশি।

কৃষকরা জানায়, এ ধান আবাদ করতে সার, সেচ, পরিচর্যা কম লাগছে। এ ধান চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বেশ সারা পড়েছে। তাছাড়া এই ধান সবার মাঝে সুগন্ধি চিকন চালের বেশ কদর রয়েছে। বিশেষ করে জামাই আপ্যায়নের পাশপাশি অতিথি আপ্যায়নে এই সুগন্ধি চাল দিয়ে-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুরি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ নানা রকমের সুস্বাদু মুখরোচক খাবার তৈরি হওয়ায় এর চাহিদার যেন কমতি নেই।

জানা গেছে, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার নারায়নপুর, উমেদপুর, আদমপুর, ধাতুরপহেলা, তুলাবাড়ি, মোগড়া, দরুইনসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের পাশাপাশি সৌখিন কৃষকরা সুগন্ধি জাতের কালিজিরা ধান আবাদ করেছে। মাঠ জুড়ে এখন সুগন্ধি ধানের সমারোহ। এরইমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন।


কৃষক মো. কালাম মিয়া ও আজম খান বলেন, এক সময় বাপ দাদা সুগন্ধি ধান আবাদ করতেন। বীজসহ নানা কারণে বেশ কয়েক বছর আবাদ করা হয়নি। গত ৪ বছর ধরে আবাদ করছি। এ মৌসুমে  প্রায় ১ বিঘা জমিতে কালিজিরা ধান আবাদ করা হয়। এতে ফলন ভালো হয়েছে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি কালিজিরা ধানের চাল ১৪০-১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এবারো আশা করছি বিক্রিতে ভালো দাম পাব।


কৃষক মো. আব্দুল হক বলেন, নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। এরমধ্যে ১ বিঘা জমিতে কালিজিরা ধান আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন খুবই ভালো রয়েছে। এরইমধ্যে ২ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি ১ বিঘা জমিতে আমন ধান ১৬ মণ পাওয়া গেছে। দু’এক দিনের মধ্যে কালিজিরা ধান কাটা হবে। আশা করছি বিঘায় ৫ মণ পাব।

আখাউড়া উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ধানের আমন ধান আবাদ  করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮ হেক্টর জমিতে কালিজিরা ধান চাষ হয়েছে। এটি দেশীয় জাতের ধানের মধ্যে অন্যতম। কৃষকরা নিজ আগ্রহে এ জাতের ধান চাষ করছেন। এ ধান আবাদে উৎপাদন খরচ কম থাকায় ও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তাই দিন দিন আবাদ বাড়ছে। ধানের ফলন ভালো রাখতে কৃষকদেরকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়। ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি এ মৌসুমে আমনের  বাম্পার ফলন হবে।

এই বিভাগের আরো খবর