ব্রেকিং:
‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন—ফজরের পর ইন্তেকাল করেছেন বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর বেঁচে নেই...

মঙ্গলবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৬ ১৪৩২   ১০ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৯৬

যাদের কীর্তি আজো খবরের অন্তরালে

এস এন ইউসুফ 

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৩  

ছবি- শিশিরেন্দ্র দাস গুপ্ত রানা

ছবি- শিশিরেন্দ্র দাস গুপ্ত রানা

কুমিল্লা একটি প্রসিদ্ধ জেলা ঢাকার পার্শ্ববর্তী যে কয়টি উন্নত জেলা রয়েছে তার মধ্যে কুমিল্লা অন্যতম একটি জেলার নাম। বৃটিশ আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলার মানুষের অধিকার আন্দোলনে কুমিল্লার কৃর্তিমান মানুষদের অবদান যুগে যুগে চিরস্মরণীয়। ঐতিহাসিক ৫২‘র ভাষা আন্দোলনে কুমিল্লার শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম যেমনি ভাবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এই বাংলার ইতিহাসে। ঠিক তেমনি ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার বীর সেনানীদের নামও রক্তকালিতে লেখা। কুমিল্লা সেই বৃটিশদের শাসন আমল থেকেই সম্পদশালীদের একটি শহর। স্বাধীনতারপূর্বে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কুমিল্লায় সম্পদশালী যে কয়জন জমিদারের নাম উঠে আসতো তাদের মধ্যে জমিদার ভুদর দাশ গুপ্ত একজন অন্যতম। তিনি কুমিল্লার একজন প্রথিতযশা আইনঅজ্ঞ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীও। জমিদার ভুদর দাশ গুপ্তের  নাতি ছিলেন কুমিল্লা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা। দাদা জমিদার ভুদর দাশ গুপ্তের সম্পদের বিত্ত থেকেই কুমিল্লা শহরের অধিকাংশ জমি এবং সম্পদ ছিলো তাদের। স্বাধীণতার পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা শহরে বাড়িঘর নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির দোকান তথা রড সিমেন্টের দোকান ছিলো হাতে গোনা দুই একটি তার মধ্যে নজরুল এ্যাভিনিউস্থ ফরিদা বিদ্যায়তন স্কুলের বিপরীত পাশে ছিলো শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানাদার রড সিমেন্টের দোকান। রানা দা ছাত্র জীবন থেকেই তার বাপদাদার ব্যবসা বাণিজ্যে সময় দিতেন। শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১১ মে, কুমিল্লা শহরে। অল্প বয়সেই তার বাবার মৃত্যু হয় তারপর থেকেই তিনি তার বাবার ব্যবসার দায়িত্ব কাঁদে নেন। বাবার মৃত্যুও পর থেকে শুরু করে তিনি ৩৩ বছর বয়সে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা তার সংসারে দুই সন্তানের জন্ম হয়। তিনি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষও বটে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্তৃক নির্বিচারে চলে বাঙ্গালীদের হত্যা, খুন ও ধর্ষণ। ওই রাতে কুমিল্লার ম্পদশালীদের মধ্যে থেকে পাকিস্তানীরা অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে তুলে নেয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল রাতে রানা দা‘কে পাকিস্তানি বাহিনী তার কুমিল্লা শহরের বাসা থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। রানা দা‘র পরিবার কুমিল্লা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হওয়ায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে পাকিস্তানিদের হাত থেকে প্রথমাবস্থায় প্রাণে রক্ষা পায়। রানা দা প্রথমবারের মতো প্রাণে রক্ষা পেলেও পরবর্তীতে জানাযায় পাকিস্তানি বাহিনী তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। যা তার বুকে পিঠে আঘাতের চিহ্ন থেকে তখন অনুমেয় করা গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পুররায় রানা দা কে তুলে নেয় পাকিস্তানী বাহিনী তারপর আর তিনি ফিরে আসেন নি। তার ফিরে না আসার সংবাদটি জানাযায় তার ভাই জনা দা থেকে। সে সময় তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি তার কাছে পৌঁছলে তিনিও কুমিল্লায় না এসে চট্টগ্রাম থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে আর তার শরীরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ের বেশে কুমিল্লায় ফিরে আসেন। দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো জনা দা ফিরে এসে দেখেন তার ভাই শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা‘র স্ত্রী তার ভাইকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। যার চিকিৎসা করতে অনেক যায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। কুমিল্লার একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক নির্মম হত্যার শিকার হয়ে প্রাণ হারালে কুমিল্লার ব্যবসায়ীক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। রানা দা‘র কে এমন নির্মম হত্যার পর পাক বাহিনী কুমিল্লার ব্যবসায়ীদের উপর আরো ব্যাপক হত্যায় জড়িয়ে পরে। এতে করে তৎকালীন সময়ে কুমিল্লা অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক ধস নামতে শুরু করে। পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক নির্মম হত্যার শিকার শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা‘র ১জন পুত্র সন্তান ও ১জন কন্যা সন্তান ছিলেন তারাও পিতা হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। শিশিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা ছিলেন কুমিল্লার ব্যবসায়ী অঙ্গনে একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ যার নেতৃত্বে কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হতেন। শিরেন্দ্র দাশ গুপ্ত রানা‘র একমাত্র ছেলে যার নাম ছিলো তাপস দাশ গুপ্ত তাপস দাশ গুপ্তের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। একমাত্র পুত্র তাপস তার পিতা রানা দা‘র মৃত্যুর পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন। দীর্ঘদিন পিতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও তাপস দাশ গুপ্ত মহামারী করোনাকালে ২০২০ সালের ১৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন। রানা দা‘র একমাত্র কন্যা মিতা দাশ গুপ্তা বর্তমানে ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে চাকুরীরত। মিতাদাশ গুপ্তার সংসারে রয়েছে দুই কন্যা সন্তান তার মধ্যে একজন প্রণতি দাশ ও প্রিয়াংকা দাশ। প্রণতি দাশ এর জন্ম ১৯৯৭সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর। প্রিয়াংকা দাশ এর জন্ম ১৯৯৯ সালের ৯ই মে। তারা বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণ হারানো এই পরিবারের খোঁজ এখন
ক‘জনইবা রাখেন। তাদের অবদানের কথা কুমিল্লার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ। 

এই বিভাগের আরো খবর