রোববার   ২৪ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ৮ ১৪৩২   ২৯ সফর ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯

‘চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব কেন দরকার, এখন বুঝছে ভারত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২৫  

চীনের সরকারি গণমাধ্যম সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর ভারত সফর নিয়ে খবরাখবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে ওয়াং ইর সীমান্ত বিবাদ নিয়ে বৈঠকের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দেশটির গণমাধ্যমে।


চীনা গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, আমেরিকার দিক থেকে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ভারত তার রণনীতিতে পরিবর্তন করতে চাইছে এবং ওয়াং ইর ভারত সফর তারই অংশ।

ভারতের সঙ্গে সেদেশের মজবুত সম্বন্ধ ‌‘গ্লোবাল সাউথের’ জন্য লাভজনক হবে বলেও লিখেছে চীনা গণমাধ্যম। এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এক কথায় ‘গ্লোবাল সাউথ’ বলে বর্ণনা করা হয়।


• মার্কিন শুল্কের কারণে ভারত-চীন কাছাকাছি আসছে
চীনের সরকারি গণমাধ্যমে ওয়াং ইর ভারত সফরকে ইতিবাচক হিসাবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুটি দেশই যে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়টির ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে চীনের গণমাধ্যমে। এই প্রসঙ্গেই আমেরিকা যে ‘একতরফা চাপ’ দেওয়ার নীতি নিয়েছে, সেটাও উল্লেখ করেছে চীনের সরকারি গণমাধ্যম।


সরকারি ইংরেজি দৈনিক চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি হিসাবেই ওয়াং ইর ভারত সফরকে দেখা হচ্ছে।

সম্পাদকীয়তেই বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর এক শুল্ক-যুদ্ধ শুরু করেছে, তখন ভারত এই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে যে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন শুল্ক থেকে রক্ষা পায়নি।

আরও লেখা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার অবস্থায় আছে ভারত। কারণ তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কৌশলগত স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে পারছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে আবার নীতিগত নমনীয়তাও বজায় রাখতে পারে।

চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এশীয় বাজারের দিকে ঝুঁকছে। কারণ রপ্তানির জন্য আমেরিকার বাজারের ওপর তাদের অতিরিক্ত নির্ভরতা ক্রমবর্ধমান শুল্কের কারণে তাদের কাছে একটা দুর্বলতা হয়ে উঠেছে।

জাতীয়তাবাদী সংবাদ ও প্রবন্ধের ওয়েবসাইট গুয়াঞ্চায় প্রকাশিত এক লেখায় ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের লিন মিনওয়াংয়ের একটি মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে পারে ভারত।

তবে তিনি বলেছেন, সম্পর্কের উন্নতিকে স্বাগত জানায় চীন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত কোনও ইস্যুতেই তারা সমঝোতা করবে না।

• কিছু বিষয়ে দ্বিমত
যদিও ওয়াং ইর ভারত সফর নিয়ে চীন ও ভারতের বক্তব্যে ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে তাইওয়ান এবং তিব্বতের সাঙপো নদীর ওপর চীনের প্রস্তাবিত বাঁধের ইস্যুতে দুটি দেশের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে অমিল দেখা গেছে।

চীনা গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন তাইওয়ান চীনের অংশ। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯ আগস্ট যে বিবৃতি জারি করেছে, সেখানে লেখা হয়েছে, চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের ইস্যুটা তোলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বিষয়ে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি।

স্পষ্টভাবে এটাও বলা হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই তাইওয়ানের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক, কারিগরি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে। এদিকে, ভারত শাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার পর ভারতীয় সামরিক বাহিনী অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা করে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় সন্ত্রাসবাদের ইস্যু জোরেশোরে তুলেছিল দিল্লি। এটাও বলা হয় ওই বিবৃতিতে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যের একটা হল সন্ত্রাসবাদের কুফল মোকাবিলা করা।

ওয়াং ই বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তবে চীনের তরফে যে বয়ান প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে ওয়াং ইর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা এস জয়শঙ্কর ও অজিত দোভালের যেসব বৈঠক হয়েছে, সেগুলোতে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনার কোনও উল্লেখ নেই।

আবার ভারতের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, তিব্বতের ইয়ারলুঙ সাংপোর (ভারতে যেটি ব্রহ্মপুত্র নদ) ভাটি অঞ্চলে চীন যে অতিবৃহৎ বাঁধ দিচ্ছে, সে ব্যাপারে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে এস জয়শঙ্কর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং এই ইস্যুতে স্বচ্ছতার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে এই ইস্যুর কোনও উল্লেখই চীনের বিবৃতিতে নেই। বিবিসি বাংলা।

এই বিভাগের আরো খবর