তিস্তা মহাপরিকল্পনা: কাল বিলম্ব নয়, বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান
ইঞ্জিনিয়ার:সীমান্ত আরিফ
প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৪

উত্তরবঙ্গের জনগণের জীবন ও জীবিকা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই নদী এখন যেন প্রতিবছর একটি অভিশাপ হিসেবে তাদের জীবনে নেমে আসে। বর্ষার সময় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি করে, আর শীতকালে পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। এই দুই মৌসুমে দুই ধরনের বিপর্যয়ই উত্তরবঙ্গের কৃষি, জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সমস্যার সমাধানে তিস্তা মহাপরিকল্পনা এক সময় আলোচনায় এসেছিল, কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখনো ঝুলে আছে। দেশের স্বার্থে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জনগণের জন্য, তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাল বিলম্ব না করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা
তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী, যা উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর সাথে প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। তিস্তার পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধি আনা সম্ভব। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে তিস্তা চুক্তির অমীমাংসিত অবস্থা এবং নদীর পানি প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ফলে এর প্রকৃত উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে উত্তরবঙ্গের জনগণ।
তিস্তার সমস্যার প্রধান উৎস নদীর অব্যবস্থাপনা এবং প্রতিবেশী ভারতের পানি প্রত্যাহার নীতি। ভারত তার সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তিস্তার পানি ব্যবহার করছে, যার ফলে শীতকালে বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ বিপদজনকভাবে কমে যায়। আবার বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় বন্যা। এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
তিস্তা মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য
তিস্তা মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য হলো তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা, যাতে বর্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এই মহাপরিকল্পনা তিস্তার পানি সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী শাসন, এবং সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি এবং কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই পরিকল্পনার একটি অন্যতম প্রধান দিক হলো নদীর তীর সংরক্ষণ এবং নদী শাসন। তিস্তা নদীর দুই তীরের জমিগুলো প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়। নদী ভাঙনের ফলে কৃষিজমি এবং বসতবাড়ি হারিয়ে যায়, যা স্থানীয় মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত সংকট সৃষ্টি করে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে নদীর পাড়ে সুরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করা গেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, ফলে স্থানীয় জনগণ তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে পারবে।
পানি ব্যবস্থাপনা ও সেচ কার্যক্রম
তিস্তা মহাপরিকল্পনার একটি বড় দিক হলো সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানির অভাব। তিস্তা নদীর পানির উপর নির্ভর করে স্থানীয় কৃষির বিকাশ সম্ভব, কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও সম্প্রসারিত করা হবে, যা কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে এবং স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অর্থনৈতিক প্রভাব
তিস্তা মহাপরিকল্পনার আওতায় একটি বড় মাপের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তিস্তার পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এটি স্থানীয় শিল্পের বিকাশেও সহায়ক হবে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য শিল্পকারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে সমৃদ্ধ করা যাবে, যা সারা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবেশী ভারতের সাথে সহযোগিতা
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে দীর্ঘমেয়াদী অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে, তা নিরসন করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সমঝোতা প্রয়োজন। তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ও কার্যকরী চুক্তি দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। বিশেষ করে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করতে পারে। তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন না হলে মহাপরিকল্পনার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। তাই কূটনৈতিক স্তরে তিস্তা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে শুধু অর্থনৈতিক নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নদী ভাঙন রোধ এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কৃষিক্ষেত্র সমৃদ্ধ হবে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে। তিস্তা নদীর অববাহিকায় জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবী এবং কৃষকদের জন্য মহাপরিকল্পনা একটি আশার আলো নিয়ে আসবে। স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, মহাপরিকল্পনার বিশাল আকার এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প, যার জন্য সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তাও প্রয়োজন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী ভারতের সাথে পানির বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, স্থানীয় জনগণকে প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত করা এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে, যাতে তারা প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে পারে।
শেষকথা:
তিস্তা মহাপরিকল্পনা কেবল একটি প্রকল্প নয়, এটি উত্তরবঙ্গের জীবন ও অর্থনীতির পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, সেচ কার্যক্রম, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তবে, কাল বিলম্ব না করে এই মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি কেবল উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
- হবিগঞ্জে ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন ক্যাম্পিং উদ্বোধন
- লিগ্যাল কনস্যুলেট ল`ফার্মের উদ্বোধন
- সচিবালয়ে কর্মচারীদের এক ঘণ্টার কর্মবিরতি
- গাছের সাথে ট্রেনের ধাক্কা বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচল যাত্রীরা
- প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে আজ বাংলাদেশে আসছে ভুটান দল
- ৬ অঞ্চলে নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত
- ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
- মুখের ব্রণ দূর করুন ঈদের আগেই যে চারটি কাজ করবেন
- প্রধান উপদেষ্টাকে জানানোর পর সিদ্ধান্ত: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
- বাংলাদেশের ম্যাচসহ আজকের খেলা টিভিতে
- চাঁদ দেখা গেছে : আমিরাতে ঈদ ৬ জুন
- জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ হাশেম চৌধুরী
- জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ হাশেম চৌধুরী
- চিতোষী ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের জোরপূর্বক যোগদানের চেষ্টা
- সিলেটে বিষ্ফোরক আইনে ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- সিলেটে সাবেক মেয়র কাউন্সিলরসহ ১২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- ইত্যাদি এবার দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত ঝিনাইদহে
- মুন্সিগঞ্জ সদরে মার্কেটে হামলা ও অর্থ লুটপাটের অভিযোগ
- জুলাই আগস্ট হত্যা মামলায় পলাতক আসামি আশরাফুলকে খুঁজছে পুলিশ
- গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণের অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ
- একাধিক মামলার পলাতক আসামি সেলিম আহমদকে খুঁজছে পুলিশ
- জমি জমার বিরোধের জেরে হামলা আহত ৪
- পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে ৫তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১ আহত ১৭
- যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ
- শাহবাগে আগুনে পুড়লো ফুলের ৮ দোকান দগ্ধ ৫
- বাঁচবেন না এসিপি প্রদ্যুমন মন ভাঙল দর্শকের
- ঈদের ছুটির পর সচল চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
- ভারতে বাস দুর্ঘটনায়, ৭০ জনের বেশি ছিলেন বাংলাদেশি পর্যটক
- ১০ শতাংশ কমছে টেলিটকের ডাটা প্যাকেজের দাম
- ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে উল্টে গেলো বালুবাহী ট্রাক ৫ কিলোমিটার যানজট
- মহাকাশের জন্ম ও মৃত্যু - ড. মো: হোসেন মনসুর
- কুরআন হাদিসে কাউকে ‘মুরগী চোরা’ বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি
- তরুণ কন্ঠের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম, শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা
- এইডস নিয়ে সচেতনতাই মূল লক্ষ্য
- গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ রেনিটিডিনে মিলল ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদান
- প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের সাথে বেড়ে চলেছে অনলাইন প্রতারনা
- আইনের সঠিক ব্যবহার নাকি প্রয়োজন নতুন আইনের?
- বৃহৎ কার্যসিদ্ধির আদ্যপ্রান্তে!
- ইমান আর অনুভূতির জায়গা এক নয় : ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান
- বঙ্গবন্ধু ও কলকাতার বেকার হোস্টেল
- আপনিও দৈনিক তরুণ কণ্ঠে’র অংশ হয়ে উঠুন, লিখুন তরুণ কণ্ঠে
- রমজান মাস স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ উপহার
- রাজনীতিকের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়? - সাজেদা মুন্নি
- ওয়ারী তালাবদ্ধ এবং বাস্তবতা
- ধর্ষণ,তোমার শেষ কোথায়?