রোববার   ১৮ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩২   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৪৭

রাজবাড়ীতে ১০ দিনে ৫ হত্যাকাণ্ড, যা জানাল পুলিশ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

রাজবাড়ীতে ১০ দিনে ৫ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাংশা থানার পাট্টা ইউনিয়নের বিলমন্ডব এলাকায় বসবাসরত এজাহারনামীয় আসামি রতন খাঁ তার স্ত্রী চামেলীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং চামেলীর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ১৫ সেপ্টেম্বর নিহত চামেলীর বাবা মো. আ. মালেক মন্ডল বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। নিহত চামেলীর সুরতহাল রিপোর্ট দেখে পুলিশের সন্দেহ হলে একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি রতন খাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। তিনি আদালতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। 

অন্যদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামে ট্রান্সফরমার মাথায় করে পালানোর সময় এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকার হন নাজমুল। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নিকটাত্মীয় নজরুল কাজীসহ অপর একজন পালিয়ে যান। পালাতে না পেরে লোকজনের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল। এ সময় নাজমুল গণপিটুনির শিকার হন। নাজমুল গুরুতর আহত হলে স্থানীয় কয়েকজন ভ্যানে করে তাকে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যান। নাজমুল মোল্লা সেখান থেকে নিজে হেঁটে গিয়ে জরুরি বিভাগে যান এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

এ ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুলের স্ত্রী আন্না বেগম বাদী হয়ে ১০০ জনকে অজ্ঞাত করে কালুখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই ঘটনায় ভিডিও ধারণকারী মূল ব্যক্তি ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সালাম দরিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। নিহত নাজমুল একজন পেশাদার চোর ছিলেন। তার নামে ডাকাতি ও চুরিসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও জানায়, গ্রেপ্তার সালাম দরি ২০২৪ সালের ১৮ মে একটি মারামারি মামলা চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০০৬ সালেরও আরেকটি মারামারির মামলা রয়েছে তার নামে।


অন্যদিকে গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকার এমদাদুলের চায়ের দোকানের পাশে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা চরমপন্থি নেতা সুশীলকে গুলি করে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে সুশীলের ভাই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুশীলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুশীল একজন চরমপন্থী দলের এই অঞ্চলের নেতা ছিলেন। তার নামে গোয়ালন্দঘাট থানায় হত্যাসহ অস্ত্র আইনের সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি ইতোপূর্বে ৫ বছর জেলও খেটেছেন। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ভিকটিমের ভাই সুনীল সরকার বাদী হয়ে গোয়ালন্দঘাট থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ জনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তার নামে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবুজ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিও জনি।

অপরদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজবাড়ীর রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামে মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে বন্যা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করেন তারই স্বামী মো. রশিদ শেখ (৩২)। ঘটনার পর নিহতের স্বামী রশিদ শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করলে পুলিশ রশিদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় রশিদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

এছাড়াও গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে নিখোঁজের দুই দিন পর মিনহাজুল শেখ (১২) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটি দুই দিন নিখোঁজ থাকায় তার বাবা থানায় জিডি করেছিলেন। 

জানা গেছে, মিনহাজ শেখ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তার সর্দারের বাগানে মাল্টা খাওয়ার লোভে বাগানে প্রবেশ করতে যান। কিন্তু মুক্তার সর্দার তার বাগান কাঁটাতারের বেড়া বিদ্যুতায়িত করে রাখেন। শিশুটি সেই বাগানের বেড়ার বিদ্যুতের তারের সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। পরবর্তীতে মরদেহ মুক্তার সর্দার ও তার সহযোগীরা ধানক্ষেতের মাঝখানে ফেলে রেখে দেন। এ ঘটনায় বাগানের মালিক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। আসামিরা পলাতক আছে। গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। 

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজবাড়ীতে ৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো জেলায় অনেক আলোচনা সৃষ্টি করে। জেলা পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডগুলোর রহস্য উদঘাটন করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই এই পাঁচ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট  ৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জেলা পুলিশ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদা কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামানসহ  জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরো খবর