ব্রেকিং:
আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

বুধবার   ০২ জুলাই ২০২৫   আষাঢ় ১৮ ১৪৩২   ০৬ মুহররম ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৫৮

পলো তৈরিতে ব্যস্ত মানিকগঞ্জের কারিগররা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩  

আহবমানন গ্রামবাংলার জনপ্রিয় পলো তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিকভাবে তৈরি করা হয়।পরম মমতায় পূর্ব পুরুষের ব্যবসা বাঁশ থেকে পলো তৈরি  করে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের কৃঞপুর ইউনিয়নের চান্দরা গ্রামের অর্ধশত পরিবার।

চান্দরা গ্রামের পরিবারের সংখ্যা দেড় শতাধিক। গ্রামের সবাই পলো তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বছরজুড়ে পলো তৈরি করে চলে তাদের জীবন। এভাবে চলছে যুগের পর যুগ। 

ঘর ও গৃহস্থালীর কাজে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিনের পর দিন বাড়ায় বাঁশের তৈরি পলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। তারপরেও অনেকেই এখনও এই পেশাটিকে আকরে ধরে রেখেছেন। এটা তাদের বাপ-দাদার পৈতিক পেশা। আবার অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়ও চলে যাচ্ছেন।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাটিগ্রাম ইউনিয়নের চান্দিড়া গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে পলো তৈরি করা হয় না। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় দেখা মেলে পলো ও পলো তৈরির জিনিসপত্র। বাঁশের শলা দিয়ে পলো তৈরির কাজ চলছে। কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বাঁশের শলা তৈরি করছেন আবার কেউ প্লাস্টিকের রশি দিয়ে তৈরি করছেন পলো। আর এভাবেই বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে এই পলো তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এ গ্রামের মানুষ। প্রায় সকলেই পলো ব্যবসার সাথে জড়িত বলে এলাকাটি পলো পাড়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
 
গ্রামের প্রতিটি পরিবারের শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধসহ সবাই পলো তৈরির কাজ করে থাকেন। এই চান্দিড়া গ্রামের পলো ও খ্যাতি জেলার গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে পলো কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন।

মাছ ধরার কাজেই শুধু এই পলো ব্যবহৃত হয় না। হাঁস-মুরগি পালন বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনেও এই বাঁশের তৈরি ছোট ছোট পলো তৈরি করা হয়। পলো তৈরির শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চান্দরার এই পলো পাড়ার লোকজন। 
স্থানিয়রা জানান, প্রতিটি পরিবারের সদস্য গড়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ পলো তৈরি করে থাকেন। তবে পুরুষের থেকে বাড়ির মহিলারাই সারা দিন পলো তৈরির কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। আশপাশের হাট-বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পলো ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দামে পলো কিনে নিয়ে যান। বাজারে প্রকারভেদে প্রতিটি পলো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর পাইকারি দরে প্রতিটি পলো ১০০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের একটি বাঁশ কিনতে খরচ পড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতিটি বাঁশ দিয়ে তিন থেকে চারটি পলো তৈরি করা যায়।
তাছাড়া এখন বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দামও বেড়ে গেছে। ফলে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। শৌখিন মানুষ ঘরে বাঙালির ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য বাঁশ বেতের পলো বেশি দাম দিয়ে কিনলেও মূলত ব্যবহারকারীরা বেশি দাম দিতে চান না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা সমিতি কিংবা সমিতি থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বাঁশ ও বেতজাত দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করলেও এতে তাদের খরচ পোষায় না। একদিকে ব্যবহারকারীর অভাব, অন্যদিকে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশ শিল্পীদের অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।


পূর্ব পুরুষদের কাছে পাওয়া বংশ পরম্পরার এ পেশায় পাঁচ বছরে আগেও বেশ সফলতা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাজারে আসার কারণে কমে গেছে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা। অন্যদিকে, প্লাস্টিক পণ্যের দাম বাঁশের তৈরি পণ্যের চেয়ে অনেক কম।

মানিকগঞ্জের চান্দরার প্রায় বিলুপ্ত বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগরদের দুর্দিন এখন চরমে। গত, বছরগুলোতে মহামারি করোনার প্রভাবে হাট-বাজারে কেনাবেচা কম এবং পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে। এখন পর্যন্ত তারা পাননি কোনো সরকারি সহায়তা। ফলে পরিবার নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। 

পলো কারিগররা জানান, আধুনিকতার বিস্তারে কমে গেছে এসব তৈজসপত্রের ব্যবহার। তবে এই বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরেরা টিকে থাকতে চায়। তাঁদের দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পের টিকে থাকা সম্ভব।

এই বিভাগের আরো খবর