সোমবার   ২০ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৫ ১৪৩২   ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩২

এক তরুণ বদলে দিল হবিগঞ্জের বিজ্ঞানচর্চার মানচিত্র

মোঃ মোসাদ্দেক হোসাইন ইমন

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৫  

 

একসময় চায়ের বাগান আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত হবিগঞ্জ আজ আলোচনায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের এক নতুন দিগন্তে। এই রূপান্তরের পেছনে রয়েছেন তরুণ বিজ্ঞানমনস্ক উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মোশাহিদ মজুমদার–যার হাত ধরে বদলে যাচ্ছে হবিগঞ্জের শিক্ষাব্যবস্থা, তরুণ প্রজন্মের চিন্তাধারা এবং বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ।

 

শায়েস্তাগঞ্জের নিশাপাট গ্রামের এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মোশাহিদ ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। অপ্রচলিত উপকরণ দিয়ে নতুন কিছু বানানোর নেশা থেকেই তার যাত্রা শুরু। উচ্চশিক্ষার জন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর তার মনে জন্ম নেয় এক বড় স্বপ্ন—নিজের অঞ্চল থেকেই দেশের জন্য বৈপ্লবিক কিছু করা।

 

২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি মাত্র ১১ জন সমমনা তরুণকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘উদ্ভাবনী বিজ্ঞান ক্লাব’। আজ সেই ছোট্ট উদ্যোগটি পরিণত হয়েছে বিশাল পরিবারে—দেশজুড়ে ২৭,০০০-এর বেশি সদস্য এবং ২৩৩টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা। তাদের কাজ ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ক্লাবটি ২৭ বারেরও বেশি বিজয়ের গৌরব অর্জন করেছে, যা হবিগঞ্জকে এনে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়—“বিজ্ঞানের জেলা”।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ‘জাতীয় যুব পুরস্কার (National Youth Award)’ অর্জন করেন মোহাম্মদ মোশাহিদ মজুমদার, যা তার অসামান্য অবদানকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয়। তবে তার সাফল্য শুধু একটি ক্লাব গঠনে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ‘উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম’, যেখানে একজন শিক্ষার্থী আইডিয়া থেকে বাস্তব উদ্ভাবক হয়ে উঠতে পারে।

 

এই ইকোসিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট, রোবটিক্স একাডেমি, অর্জন আইটি সেন্টার, রোবটিক্স শপ বিডি এবং উদ্ভাবনী আইটি লিমিটেড। এছাড়া তরুণ উদ্ভাবকদের গল্প দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সংবাদপত্র ‘দৈনিক দুর্বার’ এবং প্রকাশনা ‘অদম্য ম্যাগাজিন’।

 

মোহাম্মদ মোশাহিদ মজুমদার বলেন,

“আমার লক্ষ্য ছিল না শুধু বিজ্ঞান শেখানো–আমি চেয়েছিলাম এমন একটি পরিবেশ গড়তে, যেখানে একজন তরুণের স্বপ্ন দেখা, শেখা, গবেষণা ও সফলতা অর্জনের প্রতিটি ধাপে পাশে থাকবে একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম।”

 

আজ তার দেখানো পথে হাঁটছে হাজারো তরুণ। হবিগঞ্জের গ্রামীণ প্রান্তিক শিক্ষার্থীরাও এখন হাতে কলমে বিজ্ঞান শিখছে, তৈরি করছে রোবট, অ্যাপ, এবং প্রযুক্তিগত সমাধান।

 

জাতীয় তরুণ প্রজন্মের কাছে মোশাহিদ এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। তার হাত ধরে প্রমাণিত হয়েছে–একজন স্বপ্নদ্রষ্টা চাই, তাহলেই একটি অঞ্চল বদলে দিতে পারে তার ভাগ্য।

 

হবিগঞ্জ আজ বিজ্ঞানের আলোয় নতুন পরিচয়ে উদ্ভাসিত–এ যেন মোহাম্মদ মোশাহিদ মজুমদারের স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ।

এই বিভাগের আরো খবর