বুধবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩২   ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২১

ভুয়া কাগজপত্রই ভরসা: টাকা দিলে বয়স ও নাম সংশোধন হচ্ছে সাত দিনে!

সুমন হোসেন

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫  

দেশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়গুলো এখন দালালচক্র ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ‘টাকার খেলার’ এক দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারিভাবে ই-পাসপোর্ট সেবার শর্ত সরল করা হলেও, বাস্তবে গ্রাহকদের হয়রানি করে বাধ্য করা হচ্ছে ঘুষ দিতে। অভিযোগ উঠেছে, দালালদের মাধ্যমে ফাইল জমা দিলে ব্যাংকের টাকা জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বয়স সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ভুয়া কাগজপত্র পর্যন্ত জোড়া লাগানো সম্ভব হচ্ছে—যার বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত ফি-এর কয়েক গুণ বেশি অর্থ।

 

 

ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ঢাকা বা মাদারীপুরের মতো আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে ঘুষের বিনিময়ে কাজ দ্রুত করার একটি অলিখিত নিয়ম চালু আছে।

 

  • কৌশল: সরাসরি আবেদন জমা দিলে আবেদনপত্রে ইচ্ছে করে ‘ত্রুটি’ দেখানো হয় অথবা দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। হয়রানির শিকার হয়ে সাধারণ মানুষ বাধ্য হন দালাল ধরতে।

  • মূল্য: দালালরা প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য অতিরিক্ত ২,৫০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করে। জটিল সংশোধন বা ঠিকানা পরিবর্তন হলে এই অঙ্ক ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

  • টাকার ভাগ: দালালরা এই অর্থের একটি অংশ (প্রায় ১,২০০ টাকা) অফিসের ভেতরে বিতরণ করে, বাকিটা তাদের পকেটে যায়। অনুমান করা হয়, একটি আঞ্চলিক অফিসে দৈনিক অন্তত পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হচ্ছে।

 

 

পাসপোর্ট অফিসের এই ‘টাকার খেলা’র সবচেয়ে মারাত্মক দিকটি হলো জালিয়াতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এড়িয়ে যাওয়া।

 

  • ভুয়া সনদ: দালালরা অত্যন্ত কৌশলে সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় পরিষদের নামে করা ভুয়া জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জুড়ে দেয়।

  • দ্রুত সংশোধন: জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্রে (NID) বয়স বা নামের গুরুতর ত্রুটি সংশোধনের জন্য সাধারণত কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু দালালদের অতিরিক্ত টাকা দিলে সেই ত্রুটিগুলো সাত দিনের মধ্যেই 'ঠিক' হয়ে যায়।

  • আনসার-দালাল যোগসূত্র: পাসপোর্ট কার্যালয়ের আশপাশের কম্পিউটার দোকানগুলো এখন দালালি চক্রের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আনসার সদস্য থেকে শুরু করে অফিসের সহকারী পর্যন্ত সবাই দালালদের ফাইলকে অগ্রাধিকার দিয়ে সবার আগে কাজ সম্পন্ন করেন।

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিভিন্ন সময় পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য ও কর্মকর্তাকে আটক করেছে। অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা (পরিচালক ও উপ-পরিচালক) বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।

 

তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের এই কঠোরতা সত্ত্বেও সিস্টেমের গভীরে বাসা বাঁধা এই দালাল সিন্ডিকেট এবং ঘুষের লেনদেন আজও থামেনি।

এই বিভাগের আরো খবর