বুধবার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৬ ১৪৩২   ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২

নৌপরিবহনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ: আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আইন উন্নীতকরণ

মো: সাইফুল আলম সরকার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫  

   সকল ধরণের নৌপরিবহন ও নদীবন্দরকে সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত করতে হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আজ ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, বেলা ১১.৩০ টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, ঢাকায় আয়োজিত “পাবলিক পরিবহন ও পাবলিক প্লেস শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরো শক্তিশালী করতে হবে” শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। মানববন্ধন কর্মসূচিটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ ট্যোবাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস (বিটিসিএ) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)। 

তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ দোয়া বখশ শেখ এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থ ডেভলপমেন্ট ফাউণ্ডেশন এর প্রধান নির্বাহী আমিনুল ইসলাম বকুল। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-বাটার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও প্রত্যাশা- মাদক বিরোধী সংস্থার সভাপতি হেলাল আহমেদ এর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন বিটিসিএ সচিবালয়ের প্রতিনিধি ফারহানা জামান লিজা, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবু নাসের অনিক, পরিবেশবাদী ও উন্নয়নকর্মী উম্মে জান্নাত কনি, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু, পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সামিউল হাসান সজীব, ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধি মো: নয়ন ও ফেরদৌস হোসেন প্রমূখ।

কর্মসূচিতে জানানো হয়, দেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিদিন ১০-১২ লাখ যাত্রী চলাচল করেন। লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও নদীবন্দর এলাকায় ধূমপানের কারণে যাত্রী, নারী, শিশু এবং শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানাবিধ জটিলতা বাড়ছে। আয়োজক সংগঠনসমূহ মনে করে—শক্তিশালী আইন, কঠোর তদারকি এবং গণসচেতনতা—এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া নৌপরিবহনে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
বক্তারা বলেন, নৌপরিবহন খাতে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে আইনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই। আইনের দুর্বলতা ও তদারকির অভাবের সুযোগে নদীবন্দরে তামাক কোম্পানিগুলো এখনো বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে—যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা অর্জনের জন্য নৌপরিবহন খাতকে এখনই শতভাগ ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।

সভাপতি তাঁর বক্তব্যে পরিবহন মালিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আইনানুযায়ী প্রত্যেকটি পরিবহনে নিজ উদ্যোগে দৃশ্যমান জায়গায় “ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ”-লেখা সম্বলিত সাইনেজ লাগানোর কথা থাকলেও সরেজমিনে তার বাস্তবায়ন তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না বললেই চলে। তাই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তিনি সকল লঞ্চ মালিকদের পরামর্শ দেন। তিনি তার বক্তব্যে লঞ্চ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ধূমপান বন্ধের পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় যত্রতত্র সিগারেটের দোকান বসতে না পারে এবং টার্মিনালের সার্বিক পরিবেশ যাতে সুষ্ঠুভাবে বজায় থাকে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়ার জন্য উপস্থিত সকল লঞ্চ মালিক, শ্রমিক সহ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কর্মসূচিতে অন্যন্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন নাগরিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, লঞ্চ মালিক সমিতি, কাউন্টার ম্যানেজার ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। 

সভায় অংশগ্রহণকারীরা নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন—
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত তদারকি জোরদার করা।
সকল নদীবন্দর, লঞ্চ ও ফেরিতে স্পষ্টভাবে “ধূমপানমুক্ত এলাকা” সাইনেজ স্থাপন বাধ্যতামূলক করা।
নৌযান ও টার্মিনালে তামাকজাত পণ্য বিক্রয়, সরবরাহ ও ব্র্যান্ড প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
নৌযান মালিক, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে পরোক্ষ ধূমপানমুক্ত পরিবহনব্যবস্থার আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা।

এই বিভাগের আরো খবর