সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১ ১৪৩২   ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬

হাদরামাউত এসটিসির কব্জায়: ফের দুই ভাগে বিভক্ত হচ্ছে ইয়েমেন?

রাফিউল ইসলাম তালুকদার

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫  

দীর্ঘ এক দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে আবারও নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) হাদরামাউত প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর সাইয়ুন দখল নেওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। এই অগ্রযাত্রা শুধু সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং ইয়েমেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

 

এসটিসি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের অংশ হলেও তাদের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন প্রতিষ্ঠা। হাদরামাউতে সাম্প্রতিক অভিযান সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসটিসির ভাষ্য অনুযায়ী, এই অভিযান সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের অংশ। তবে বাস্তবতায় এটি দক্ষিণ ইয়েমেনের ঐতিহাসিক সীমানা পুনর্দখলের একটি কৌশলগত প্রয়াস।

 

ইয়েমেনের উত্তর ও দক্ষিণের বিভাজন নতুন নয়। ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশ শাসিত দক্ষিণ ইয়েমেন এবং উসমানি প্রভাবাধীন উত্তর ইয়েমেন আলাদা রাজনৈতিক বাস্তবতায় গড়ে ওঠে। ১৯৯০ সালে একীকরণ হলেও আস্থার সংকট কাটেনি। ১৯৯৪ সালের বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক বৈষম্য দক্ষিণে ক্ষোভ আরও গভীর করে তোলে।

 

২০১৪ সালে হুথি বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ণমাত্রার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইয়েমেন কার্যত একাধিক ক্ষমতাকেন্দ্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উত্তরে ইরান সমর্থিত হুথিরা এবং দক্ষিণে বিভিন্ন মিলিশিয়া ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এই বাস্তবতায় এসটিসি ধীরে ধীরে দক্ষিণের প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

ভৌগোলিক দিক থেকে ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হাদরামাউত শুধু আয়তনেই নয়, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অধিকাংশ তেল ও গ্যাসসম্পদ এই অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে হাদরামাউতের নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নয়, অর্থনৈতিক শক্তির ওপর দখল প্রতিষ্ঠা।

ইয়েমেন সংকটে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা এক নয়। সৌদি আরব মূলত সীমান্ত নিরাপত্তা ও হুথিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগ্রহী। বিপরীতে আমিরাত দক্ষিণাঞ্চলে সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ, বন্দর ও নিরাপত্তা অবকাঠামোতে প্রভাব বিস্তারকে অগ্রাধিকার দেয়। এসটিসির সঙ্গে আমিরাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই কৌশলেরই প্রতিফলন।

 

বিশ্লেষকদের মতে, এসটিসির সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রার লক্ষ্য হুথিদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ নয়। বরং দক্ষিণে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দরকষাকষিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য।

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এসটিসির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়ছে। এতে করে দেশটি কার্যত উত্তর ও দক্ষিণে স্থায়ীভাবে বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এই বাস্তবতাকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে পরিচালিত না করে, তবে ইয়েমেনের যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেতে পারে, যার পরিণতি হবে আরও দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা।

এই বিভাগের আরো খবর