বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৪ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

শ্রীমঙ্গলের স্বর্ণপদক জয়ী চৈতীকে নিয়ে গ্রামে আনন্দের বন্যা

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫  

দুবাইয়ে এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছে ১৩ বছর বয়সী চৈতী রানী দেব। স্বর্ণপদক জিতায় গ্রামে আনন্দের বন্যা বইছে। গত শুক্রবার (১২ই ডিসেম্বর) এফ-৪০ জ্যাভলিন থ্রো ইভেন্টে তিনি ৯.৪৫ মিটার দূরত্বে ছুড়ে স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়েন তিনি। দেশের ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি) ইতিহাসে এটা সেরা সাফল্য।

 

চৈতির এই বিজয় বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। চৈতীর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের ভুনবীর গ্রামের সত্য দেবের মেয়ে। তিনি ভূনবীর দশরথ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। চৈতী উচ্চতায় তিন ফুট সাত ইঞ্চি।

 

গত সোমবার (১৫ই ডিসেম্বর) রাতে নিজ বাড়িতে পৌঁছান চৈতী রানী। পরদিন থেকে তার বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে দেশের গর্ব চৈতী রানী দেবকে সংবর্ধণা প্রদান করেন সর্বস্তরের মানুষ।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্স (এসএইচআই), বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রশিক্ষক দেব প্রসাদ শীল, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।

 

চৈতীর বাবা সত্য দেব বলেন, “আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে এখন দেশের জন্য আন্তর্জাতিক খেলায় লড়াই করে পদক ছিনিয়ে আনছে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমরা কতটুকু খুশি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার মেয়েটার জন্য সবাই দোয়া আশীর্বাদ করবেন।”

 

‘চৈতীর বিদ্যালয় ভুনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ঝলক চক্রবর্তী বলেন, “ দুবাই ২০২৫ এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে আমাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী চৈতী রানী দেব অসামান্য প্রতিভা দেখিয়ে দুটি স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। তার এই সাফল্য বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্জনে বাংলাদেশের নাম উন্মোচন করে।”

 

চৈতী রানী দেব বলেন, “আমার এই অর্জন দেশবাসীসহ এলাকাবাসীকে উৎসর্গ করেছি। সামনে আমিদেশের পক্ষে খেলতে জাপান যাব। সবাই দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন আমি যেন দেশের পতাকাকে আবারও বিশ্বমঞ্চে উত্তোলন করাতে পারি।”

 

প্রশিক্ষক বাগেরহাটের বাসিন্দা দেব প্রসাদ শীল বলেন, “ প্রথম পরিচয়ের পরই দেখেছিলাম তার মধ্যে সাফল্যের ক্ষুধা কাজ করে। চৈতি অন্যদের মতো নয়। কিন্তু অন্যদের চেয়ে শক্ত। আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম, কিভাবে তাকে নিয়ে কাজ করবো। পরে দেখলাম, চৈতি প্র্যাকটিস করলে কেউ তাকে আটকে রাখতে পারে না। সে একটানা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জগিং করতে পারে। মাত্র কয়েক মাসের প্রশিক্ষণে জাতীয় পর্যায়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় সে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর দুবাইয়ে দুটি ইভেন্টে এশিয়ার অসংখ্য প্রতিযোগিকে টপকে সে স্বর্ণপদক লাভ করে দেশকে গৌরবান্বিত করেছে। আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত।”

এই বিভাগের আরো খবর