বৃহস্পতিবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২০

রাজনৈতিক দমনপীড়নে আড়িপাতাকে অবৈধ ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫  

মুঠোফোনে বেআইনি আড়িপাতা এবং এর অপব্যবহার রোধে কঠোর বিধান রেখে ‘টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়েছে। এই অধ্যাদেশে ‘জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে’ বৈধভাবে আড়িপাতার জন্য একটি নতুন কারিগরি প্ল্যাটফর্ম ‘কেন্দ্রীয় আইনানুগ ইন্টারসেপশন সাপোর্ট প্ল্যাটফর্ম (সিএলআইএসপি)’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ পাস হলে অবাধে আড়িপাতার অভিযোগ থাকা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, রাজনৈতিক কারণে দমনপীড়নের উদ্দেশ্যে কোনো সংস্থা আড়িপাততে পারবে না এবং আড়িপাততে হলে আদালত বা আধা বিচারিক কাউন্সিলের আগে থেকে অনুমোদন লাগবে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে।

 

দীর্ঘদিন ধরে আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা মুঠোফোনে বেআইনি আড়িপাতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি সেই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতেই তৈরি হয়েছে।

 

সিএলআইএসপি গঠন: নতুন প্ল্যাটফর্ম 'কেন্দ্রীয় আইনানুগ ইন্টারসেপশন সাপোর্ট প্ল্যাটফর্ম (সিএলআইএসপি)’ গঠিত হবে। এর পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাঠামো ঠিক করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

এর আওতায় থাকবে ভয়েস কল, বার্তা, ইন্টারনেট ট্রাফিক, ডিজিটাল লেনদেনসহ সব তথ্যউপাত্ত।

অপব্যবহার রোধ: প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৯৭-এর ৪ ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, রাজনৈতিক কারণে দমনপীড়নের উদ্দেশ্যে আড়িপাতা যাবে না।

 

স্বচ্ছতা: আড়িপাতা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তাৎক্ষণিক বিপদ: নাগরিকের জীবনরক্ষা বা তাৎক্ষণিক বিপদ হলে 'সীমিত পরিসরে' ইন্টারসেপশন শুরু করা যাবে, তবে শুরু করার ১৪ দিনের মধ্যে আধা বিচারিক কাউন্সিলের প্রত্যয়ন নিতে হবে। প্রত্যয়ন না পেলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

 

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এনটিএমসির বিরুদ্ধে অবাধে আড়িপাতার অভিযোগ ছিল। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পাস হলে এনটিএমসি বিলুপ্ত হবে এবং তার সমস্ত সম্পদ ও সক্ষমতা সিএলআইএসপি-এর অধীনে স্থানান্তরিত হবে।

 

 

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)।

 

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) (সরকারপ্রধানের অনুমতি নিয়ে)।

নতুন যুক্ত হয়েছে: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।

 

অধ্যাদেশের খসড়ার কিছু ধারা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ৩৪ ধারার 'ঙ' ও 'জ' উপধারায় কমিশনের প্রশাসনিক ক্ষমতা সরকার বা মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করায় কর্মকর্তারা আপত্তি জানিয়েছেন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী এই সিদ্ধান্তকে 'হঠকারী' বলে মন্তব্য করে বলেন,

"এই সংস্থার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যদি মন্ত্রণালয়ের হাতে চলে যায়, তাহলে সেটি আর স্বাধীন কমিশন থাকবে না। বিটিআরসি তখন অধিদপ্তরের মতো কাজ করবে।"

 

চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে এবং আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে।

বিলুপ্তি ও গঠন: অধ্যাদেশ পাস হলে এনটিএমসি বিলুপ্ত হবে এবং সিএলআইএসপি গঠিত হবে।

 

টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের খসড়াটি বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিটিআরসি কর্মকর্তারা এই অধ্যাদেশের কিছু ধারার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং কলম বিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

 

অধ্যাদেশটি পাস হলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। রাজনৈতিক দমনপীড়নের উদ্দেশ্যে আড়িপাতা বন্ধের বিধানটি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশাসনিক প্রভাব: এনটিএমসি বিলুপ্ত হয়ে সিএলআইএসপি গঠিত হলে আড়িপাতার সরকারি কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে বিটিআরসির স্বাধীনতা খর্ব হলে তা টেলিকমিউনিকেশন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এর কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর