শনিবার   ০৩ মে ২০২৫   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২   ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২৭

বাড়ি থেকে বিতাড়িত মায়ের ঠাঁই হয়েছে প্রবীণ নিবাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক  

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২২  

নাদিরা বেগম (৭০)। জন্মস্থান রাজধানীর সূত্রাপুরে। বাবা তালুকদার মোহাম্মদ ও মা ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির আদরের মেয়ে নাদিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর কর্মজীবনে মাইলস্টোন কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন। নাদিরা বেগমের দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটি মানসিক প্রতিবন্ধি, মেয়েটি ছোট একটি চাকরি করেন।

নগরীর ৮৯/১ পূর্ব রামপুরায় নাদিরা বেগমের বাবার ৫ কাঠা জমিতে চারতলা ভবন ছিল। এর দুই তলা নাদিরা বেগমকে দিয়েছিলেন বাবা তালুকদার মোহাম্মদ। ১৯৯১ সালে বাবা মারা যান। এর পরে ভাই তালুকদার ইফতেখার উদ্দিন ও তালুকদার বখতিয়ার নাদিরা বেগমকে বাসা থেকে বের করে দেন। বাপের বাসায় থাকার জন্য মামলা করেছিলেন। কিন্তু দুই ভাইয়ের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সাল থেকে এই নারীর ঠাঁই হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও প্রবীণ নিবাসে। দেখতে দেখতে ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রবীণ নিবাসে আর থাকতে চান না বৃদ্ধা। ফিরতে চান বাপের ভিটায়।


বাপের ৫ কাঠা জমির উপরে ৮ তলা ভবন উঠেছে। ভবনে ১৬টি ফ্ল্যাট হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ফ্ল্যাট ডেভলপার নিয়েছে। বাকি ৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে যে কোনো একটি পেতে চান তিনি।

রোববার (৮ মে) নগরীর প্রবীণ নিবাসে মা দিবসে নানা বিষয়ে কথা হয় এই অসহায় মায়ের সঙ্গে। প্রবীণ নিবাস থেকে বাপের ভিটায় ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়ে নাদিরা বেগম বলেন, যাদের কেউ নেই তাদের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আমারও একই অবস্থা হয়েছে। তারা (ভাইয়েরা) আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলো, এটা নিয়ে কোন কথা নাই। অথচ আমি কেন মামলা করলাম এটা নিয়ে কথা হচ্ছে।jagonews24

 

‘বাপের জমিতে ৮টা ফ্ল্যাট আছে। একটা ফ্ল্যাট পাইলেই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হতো না। এখানে মাসে ৪ হাজার টাকা দিয়ে থাকতে হয়।’


তিনি বলেন, আমাদের প্রবীণ নিবাসে মোট ১৬ জন মা রয়েছেন। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মায়েরা নিজেদের মতো করে থাকছেন। সবাই মিলে একটা ভালো পরিবেশে দিন অতিবাহিত করছেন।

প্রবীণ নিবাসের ওই ১৬ জন মায়ের সবাই উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে কেউ ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেউ ছিলেন শিক্ষিকা কেউ ছিলেন ডাক্তার। কিন্তু শেষ বয়সে সবারই ঠাঁই হয়েছে প্রবীণ নিবাসে।

প্রবীণ নিবাসের ব্যবস্থাপক ডা. মোহসীন কবির জাগো নিউজকে বলেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। ফলে প্রবীণ জনসংখ্যাও বাড়ছে। দেশে মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশই প্রবীণ। যা প্রায় দেড় কোটি। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে ২০২৫ সালে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ প্রবীণ থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠছে। এর ফলে বৃদ্ধাশ্রমে পিতা-মাতার সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রবীণ নিবাসে যেসব মায়েরা আছেন সবাই নিজ নিজ অবস্থানে ব্যক্তি জীবনে উজ্জ্বল। অনেকের বাড়ি ছিল, ফ্ল্যাট ছিল। নানা কারণে প্রবীণ নিবাসে আছেন। নিজের মতো করে খাচ্ছেন ও ঘুরছেন। সবার সঙ্গে গল্পে আড্ডায় দিন পার করছেন। সবার উচিত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক হওয়া। কারণ ভুলে গেলে চলবে না আমরাও একদিন প্রবীণ হবো। 

এই বিভাগের আরো খবর