সোমবার   ১৪ জুলাই ২০২৫   আষাঢ় ২৯ ১৪৩২   ১৮ মুহররম ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৬৭

দেশের চতূর্থ মানব রোবট তৈরি করলো কুবি শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০১৯  

রোবটির নাম ‘সিনা’। মানুষের মতো দেখতে। কথাও বলে মানুষের মতো। এমনি দেশের চতূর্থ মানব রোবট তৈরি করলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই মাসের কম সময়ে তৈরি করে দলটি। মাত্র ৩৭ হাজার টাকায় সিনাকে তৈরি করে সকলকে চমকে দিয়েছে। দুইজন সহপাঠীর সহযোগিতায় রোবটটি তৈরি করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সনজিত মন্ডল। দলটির দাবি তাদের তৈরি রোবট সিনা মানুষের মত কথা বলতে পারে। সাথে সামনে পিছনে সবদিকে চলতে পারে।

রোবট সিনাকে ১০৫৩ লাইনের আর্ডুইনো কোড দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। যাকে মোবাইল সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রোবটটি তৈরি করতে সনজিতের সাথে কাজ করেছিলো পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাঈয়েদুর রহমান ও আইসিটি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জুয়েল নাথ।

টিমটির দলনেতা সনজিত মন্ডলের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামারী গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই রোবট তৈরির স্বপ্ন ছিলো তার। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় হয়ে উঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে টিউশনির টাকা দিয়ে চলতে হতো তাকে। টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে একসময় ছোট রোবট তৈরি করেন। তা নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশও নেন। সেখান থেকে শুরু স্বপ্ন বুনার। কুমিল্লায় ভাড়া বাসায় নিজেই ল্যাব তৈরি করেন তিনি। সারাদিন ক্লাস আর সন্ধ্যায় টিউশনি করিয়ে রাতে ল্যাবে কাজে মগ্ন থাকতেন তিনি। অবশ্য ল্যাবের ড্রিন মেশিনের শব্দে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও পায় সে। কিন্তু দমে যাননি। কাজ চালিয়ে যান। অবশেষে ছোটবেলার স্বপ্নকে সত্যি করে তৈরি করেন রোবট ‘সিনা’।

রোবট তৈরি টিমের সদস্যরা বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিলো রোবট তৈরি করার। আমাদের সায়েন্স ক্লাবের মাধ্যমে সুযোগটি এসে যায়। বার্ডের অর্থায়নে আমরা রোবটটি তৈরি করি। আমরা দুই মাসেরও কম সময়ে রোবট সিনাকে তৈরি করেছি। অর্থও বেশি ছিলো না। সামনে যদি সময় ও অর্থ বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে আমরা আরো ভালো করবো। টিমের সহযোগী আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন আমরা টানা রোবটটি তৈরির কাজ করেছি। অনেক সময় সারারাত কাজ করতে করতে ছাদেই ঘুমিয়ে যেতাম। কড়া রোদে ঘুম ভাঙ্গলে আবার রুমে যেয়ে কাজে লেগে যেতাম।

রোবট ‘সিনা’কে বর্তমানে কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির লাইব্রেরিতে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

প্রতিদিন বিভিন্ন স্কল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় উৎসুক জনতা রোবটটি দেখতে এখানে ভিড় জমায়। কথা হয় রোবটটি দেখতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী ফারিহা মিমের সাথে। হাসি মুখে সে বলে, বইয়ের পাতায় রোবট পড়েছি। কিন্তু আমাদের মতো দেখে অবাক হয়েছি। সে কথাও বলতে পারে। হাটতেও পারে। আবার আমাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। রোবটটি দেখে খুব ভালো লেগেছে।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) অর্থায়নে ও কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাবের সহায়তায় মাত্র দুই মাসে রোবটটি তৈরি করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রোবটটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে হস্তান্তর করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোবট তৈরি করায় প্রশংসা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তা না হলে এত কম টাকায় তারা রোবট করতে পারতো না। তারা শুধু সুযোগ চায়। আমি সুযোগ তৈরি করে দেব সবসময়। আর তাদেরকে বলবো এগিয়ে যাও। আগামীর পৃথিবী তোমাদের। তোমরাই গড়বে তোমাদের পৃথিবী।

এই বিভাগের আরো খবর