শনিবার   ০৩ মে ২০২৫   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২   ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২১৫

ওসি-এসআই পরিচয়ে সরকারি চাকরির প্রলোভনে ২ কোটি টাকা হাতিয়েছেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক  

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২২  

পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা পরিচয়ে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতচক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (১ জুন) রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- প্রতারণা ও জালিয়াতচক্রের মূলহোতা মো. হেলাল উদ্দিন (৫১), মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু (৪৭), মো. খন্দকার মারুফ (৩৭) ও মো. আব্দুল কাদের ওরফে রাজু (২৯)।
এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সংস্থার ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিল, ১১ পাতা ভুয়া নিয়োগপত্র, তিন পাতা নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র, আটটি মোবাইল ফোন ও নগদ সাড়ে ২১ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার এ চক্রের মূলহোতা হেলাল উদ্দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার অবসরপ্রাপ্ত ওসি ও বিভিন্ন থানার অবসরপ্রাপ্ত এসআই পরিচয়ে প্রার্থীদের সরকারি চাকরির প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রায় ৫ বছর ধরে চক্রটি ৫০ জন চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

jagonews24

বুধবার (১ জুন) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় প্রতারকচক্রের সদস্যরা সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩১ মে) রাতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার হেলাল উদ্দিন প্রতারণা ও জালিয়াতচক্রের মূলহোতা। তিনি নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার ওসি, এসআই পরিচয় দিতেন। ভুক্তভোগীদের কথার জালে ফাঁসিয়ে চাকরির প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। জালিয়াতচক্রের প্রধান হিসেবে তিনি প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়েছেন, যা পরে চক্রের অন্য সদস্যদের মাঝে ভাগ করে দিতেন। চাকরিপ্রার্থীদের আর্থিক অবস্থাভেদে তিনি প্রার্থীপ্রতি ৫-৯ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার মফিজুল ইসলাম লেবু ও আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মূলহোতা হেলাল উদ্দিনের কাছে নিয়ে আসতেন। হেলাল উদ্দিন ‘বস’ সেজে চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিতেন। পরে ভাড়া করা গাড়িতে সরকারি বিভিন্ন অফিসে যেতেন। প্রার্থীদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে নিজে নেমে অফিসে ঢুকতেন। দীর্ঘসময় পর বের হতেন। এভাবে প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিল ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভুয়া সই সংবলিত অফিস আদেশ এবং ভুয়া নিয়োগপত্র খামে করে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন। ভুক্তভোগীদের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য মেডিকেল টেস্টের নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যেতেন। প্রথমে তারা প্রতিশ্রুতি দিতেন, চাকরি হওয়ার পর টাকা নেওয়া হবে। তবে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার আগের রাতে তারা বলতেন, আরও টাকা দিতে হবে। না হলে আগামীকাল চাকরি কনফার্ম করা যাবে না। ভুক্তভোগীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় তাদের চাহিদামতো অগ্রিম টাকা দিতেন।

‘গ্রেফতার খন্দকার মারুফ চক্রের মূলহোতা হেলাল উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অধিক বিশ্বাস স্থাপনের জন্য হেলাল উদ্দিনও খন্দকার মারুফের সহায়তা নিতেন। মারুফ ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করতেন।’

jagonews24

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরিপ্রার্থীদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে চাকরির প্রলোভনে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। যদিও তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে চাকরি দিতে পারেননি। গত ৫ বছর ধরে চক্রটি ৫০ জন চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রেফতারদের প্রত্যেকেই আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্বীকারও করেছেন।’

র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার হেলাল উদ্দিন বগুড়ার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন। তিনি নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার অবসরপ্রাপ্ত ওসি পরিচয় দিতেন। খন্দকার মারুফ এইচএসসি পাস। তিনি বিভিন্ন দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করতেন। মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু এসএসসি পাস। তিনি কুড়িগ্রামের অলিপুর থানার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। আব্দুল কাদের ওরফে রাজু একটি বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছেন।

এই বিভাগের আরো খবর