বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫   বৈশাখ ৩১ ১৪৩২   ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬২

পাশ্চাত্য বনাম ইসলামে নারী স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮  

ইউরোপে আঠারো শ’ শতাব্দি ছিল এমন সময় যে সময় সেখানকার অধিকাংশ লোকের হৃদয় থেকে ঈমানের শেষ বিজটিও উপড়ে ফেলা হয়েছিল। এর পূর্বে ইউরোপেও প্রাকৃতিক কর্মবণ্টন চালু ছিল; পুরুষ উপার্জন করত আর নারী ঘরের কাজ আঞ্জাম দিত। আর যেহেতু সে সময় ওখানে ‘শিল্পবিপ্লব’ হয়নি; এ জন্য সাধারণত লোকেরা কৃষিকাজ করত। জীবন নির্বাহের মানও সাধাসিধে ছিল; ফলে বেশি অর্থে প্রয়োজনও দেখা দেয়নি এবং পুরুষ জীবন পরিচালনার সেই কর্মবণ্টন পরিবর্তনেরও প্রয়োজন বোধ করেনি।
আঠারো শ’ শতাব্দিতে যখন মেশিন আবিষ্কৃত হলো তখন ইউরোপে শিল্পবিপ্লব ঘটল। স্বাভাবিক জীবন পদ্ধতির স্থলে পুঁজিবাদি অর্থনীতির উদ্ভব হলো। শহর-বন্দরে বড় বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠল। ফলে গ্রাম্য লোকেরা জমিদারদের অন্যায়-অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বার্থে শহরে পাড়ি জমাতে থাকল।

অর্থনৈতিক এই বিপ্লব সাধারণ মানুষের জীবন পদ্ধতিতেও প্রভাব ফেলল। সমাজে প্রতিটি মানুষের নিজ অবস্থান ঠিকিয়ে রাখতে অত্যধিক আয়-উপার্জনের প্রয়োজন দেখা দিল।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সমাজের স্বার্থপর লোকেরা যারা কোনো ধরনের ত্যাগ ছাড়াই নারীদের থেকে উপকৃত হয়ে আসছিল তাদের এ কথা বরদাশত হলো না যে, এত ব্যয়বহুল জীবন নির্বাহের দায়িত্ব পুরুষ একাই বহন করবে। জীবন পদ্ধতির এই আমূল পরিবর্তনের ফলে নারী ঘরে বসে থাকা পুরুষের জন্যে দু’টি কারণে অসহনীয় হয়ে গেল:
এগুলোর মধ্যে এক কারণ তো হলো পুরুষের সেই লোভনীয় স্বভাব যা নারী থেকে পৃথক থাকাকে মোটেই পছন্দ করে না। যেহেতু জমিদারি প্রথা চলমান থাকাবস্থায় পুরুষ কৃষিকাজে গেলেও নারী থেকে বশি দূরে থাকতে হতো না এ জন্যে তখন কোনো সমস্যা হয়নি। আর শিল্পবিপ্লবের পরে তো নতুন নতুন গার্মেন্টস, অফিস-আদালতে চাকুরি করার প্রয়োজন হলো এবং অফিসিয়াল কাজে ঘরের বাইরেই বেশি সময় অতিবাহিত করতে বাধ্য হলো; ফলে নারী থেকে দূরে থাকা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়লো।

দ্বিতীয় কারণ ছিল, জীবন নির্বাহের মান উন্নীত হওয়ার কারণে যেহেতু পরিবারের খরচ বেড়ে গেল তাই পুরুষ একাই এ ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য মনে করল।

সুতরাং পুরুষরা তাদের এই স্বার্থপরতা ঢেকে রাখার জন্য কৌশল অবলম্বন করল। আজও নারীরা ইউরোপের সেই চতুর পুরুষগুলোর প্রতারণার জালে আবদ্ধ রইল! পুরুষরা ‘নারীর স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার আন্দোলন’ এর শ্লোগান দিয়ে তাদের কূটকৌশলের বহিঃপ্রকাশ করল।

বস্তুত নারীরা ওই প্রতারণার শিকার হলো। চাকুরীর জন্যে ঘরের বাইরে গেল; পুরুষরা তাদের মাধ্যমে যেমন নিজেদের দায়িত্বভার হ্রাস করল তেমনি তারা নারীদের উন্মোক্তভাবে দেখার সুযোগ পেয়ে নিজেদের জৈবিক ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করল। আজকাল তো নারীদেরকে পুরুষদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যা সুস্থ বিবেকসম্পন্ন যে কোনো মহিলারই বাধসাধার কথা। মার্কেট, হোটেল, হাসপাতাল, দোকান, অফিস ইত্যাদির কাউন্টারে, পত্রপত্রিকায়, বিজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তিতে নারীদের ছবি দিয়ে ক্রেতা-গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন পণ্যে নারীর দেহের বিশেষ বিশেষ লোভনীয় অঙ্গের ছবি দিয়ে ব্যবসা চাঙ্গা করা হচ্ছে। এতে কি নারীর সতীত্ব-স্বকীয়তা, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান কিছু বাকি থাকছে?!

কিন্তু হায়! আজ অনেক নারী বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে পরপুরুষের ভোগের বস্তু হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন! স্বাধীনতা লাভের আশায়! অথচ ইসলাম নির্দেশিত পথই ছিল তাদের জন্যে সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বাধীনতা লাভের একমাত্র উপায়।