বুধবার   ১৪ মে ২০২৫   বৈশাখ ৩১ ১৪৩২   ১৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯৬

আল্লাহর স্মরণে যেভাবে মুক্তি পেল তিন যুবক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮  

একবার তিন ব্যক্তি কোনো কাজে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি আরম্ভ হলো। কোনো উপায় না পেয়ে সবাই একটি অন্ধকার গুহায় আশ্রয় নিলেন। আচমকা ওপর থেকে একটি বড় পাথরখণ্ড গড়িয়ে পড়লো। বন্ধ হয়ে গেলো গুহার মুখ। বেরোবার আর কোনো পথ অবশিষ্ট রইলো না। পরিস্থিতি সামাল কীভাবে দেওয়া যায়, ভেবে পাচ্ছিলেন না কেউই। খানিকপর পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, ‘চলো, নিজেদের কৃতকর্মের প্রতি দৃষ্টি দিই। যদি কোনো আমল আল্লাহর জন্য করে থাকি, তাহলে তার ওসিলা করে প্রার্থনায় মগ্ন হই। হয়তো তিনি পাথরখণ্ড সরিয়ে আমাদেরকে মুক্তি দেবেন।’

পরামর্শ মোতাবিক প্রথমজন দু’হাত তুললেন। বললেন, ‘রাব্বুল আলামিন, আমার ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং ছোট ছোট সন্তান রয়েছে। আমি তাদের জীবিকার জন্য পশু চরাই। সন্ধ্যেয় যখন বাড়ি ফিরি, দুধ দোহন করে সন্তানদের আগে তাদের খাওয়াই। হঠাৎ একদিন পশুগুলি দূর কোনো বাগানে চলে যায়। খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি ফিরতে দেরি হয় আমার। রাতে এসে দেখি বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি ঠিক আগের মতো দুধ দোহন করি। দুধের বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি তাদের শিওরে। এদিকে সন্তানগুলি খিদেয় কান্না করছে। তবু তাদের খেতে দেই না। কিন্তু তারাও আর ঘুম থেকে জাগেননি। এভাবে ভোর হয়। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমি এ কাজটি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য করেছি। সুতরাং আপনি আমাদের ওপর দয়া করুন। পাথরখণ্ড সরিয়ে দিন। যেনো সূর্যের আলো আর আকাশের শুভ্রতা দেখতে পাই।’ মহামহিম তার ডাকে সাড়া দিলেন। পাথরখণ্ডটি খানিকটা সরে গেলো।

এবার দ্বিতীয় ব্যক্তি খুব আশা নিয়ে ফরিয়াদ করলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন রয়েছে। রূপেগুণে যে বেশ অতুলনীয়। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। চাইতাম একান্তভাবে। একদিন একলা ঘরে তাকে কুপ্রস্তাব দিলাম। কিন্তু সে প্রথমে অসম্মতি জানালো। অর্থের অভাবে শেষমেষ রাজি হলো। আমি তাকে একশো দিনারের লোভ দেখালাম। এরপর যখন তার রানের ওপর চড়লাম, সে মুখ খুললো। বললো, আবদুল্লাহ! আল্লাহকে ভয় করো। দয়া করে আমার সতীত্ব নষ্ট কোরো না। রাব্বুল আলামিন হে! আমি কেবল তোমায় খুশি করবার জন্য সেই খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকেছি। সুতরাং তুমি আমার ফরিয়াদ মঞ্জুর করো। আমাদের জন্য গুহার মুখ খুলে দাও।’ আল্লাহ তায়ালা তার ডাকেও সাড়া দিলেন। পাথরখণ্ডটি আরও একটুখানি সরে গেলো।

সবশেষে তৃতীয়জন হাত তুললেন, ‘রাব্বুল আলামিন! আমি এক শ্রমিককে কিছু চালের বিনিময়ে কাজ দিই। সে তার কাজ শেষে বললো, আমার মজুরি দিন। আমি কিছু না বলে তার প্রাপ্য তাকে দিলাম। কিন্তু সে তা নিতে অস্বীকৃতি জানালো। সেখান থেকে চলেও গেলো। তারপর তার প্রাপ্য দিয়ে ক্রমাগত কৃষি কাজে খাটালাম। গরু, ছাগল, গাধাসহ বিভিন্ন পশু কিনে পুষতে লাগলাম। ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে তাতে। হঠাৎ সে শ্রমিক একদিন এসে বললো, আল্লাহকে ভয় করুন। জুলুম করবেন না। আমার প্রাপ্য আমায় বুঝিয়ে দিন। আমি তাকে গরু, ছাগল, গাধার পাল দেখিয়ে বললাম, এগুলো সব তোমার। নিয়ে যাও। সে ভাবলো, তার সঙ্গে ঠাট্টা করছি। বললাম, উপহাস করছি না। সত্যি বলছি, এসব তোমার প্রাপ্য। এরপর সে তার প্রাপ্য নিয়ে চলে গেলো। ইয়া আল্লাহ! আপনি অবগত, আমি কেবল আপনার জন্যই এ কাজ করেছি। সুতরাং দয়া করে পাথরখণ্ড সরিয়ে দিন। যাতে আমরা বেরোতে পারি।’ আল্লাহ তারও প্রার্থনা কবুল করলেন। পাথরখণ্ডটি পুরোই সরে গেলো। ’ (সহিহ বুখারি : ৫৫৪৯)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা গেলো, আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ইবাদতের বিকল্প নেই। আর ইবাদত তখনই গ্রহণীয় হবে, যখন কৃতকর্ম ভালো হবে, আস্থা-বিশ্বাস ও নিয়ত নির্ভুল হবে, উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি হবে, পার্থিব চাহিদা থেকে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।