মঙ্গলবার   ২১ জানুয়ারি ২০২৫   মাঘ ৮ ১৪৩১   ২১ রজব ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৫

রাজধানীর নীলক্ষেতে গাউসুল আজম মার্কেট দখল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২৫  

রাজধানীর নীলক্ষেতের অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা গাউসুল আজম সুপার মার্কেট নিয়ে চলছে দখল ও আধিপত্যের লড়াই। এর ফলে মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অসহনীয় দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে সাবেক এক ছাত্রদল নেতা মার্কেটটি দখল করে নিয়েছেন। এ নিয়ে নিউমার্কেট থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি।

 

গাউসুল আজম সুপার মার্কেটটি ২০০০ সালের শেষ দিকে নির্মাণ করেন মোতালেব মিয়া। মার্কেটের শুরু থেকে তিনি এর মালিক ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করেই মোতালেব মিয়া মার্কেট পরিচালনা করতেন। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করেছিলেন।

 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। এই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কথিত প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন গায়ের জোরে মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে উদ্যোগী হন।

 

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কামাল হোসেন একদল সন্ত্রাসী নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করেন এবং মোতালেব মিয়াকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি মারধর করেন। এক পর্যায়ে মোতালেব মিয়াকে জোরপূর্বক মার্কেট থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই সহিংসতার ফলে মোতালেব মিয়া গুরুতর শারীরিক আঘাত পান এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

 

মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া, দোকান বন্ধ করার হুমকি, চাঁদা দাবি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন এসব কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, “আমরা এখানে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছি। মোতালেব ভাই কখনো আমাদের কোনো অসুবিধা হতে দেননি। কিন্তু এখন আমাদের প্রতিটি দিন আতঙ্কে কাটে। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। দোকানে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। চাঁদা না দিলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

 

আরেকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”

 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা আর এই অস্থির পরিবেশে কাজ করতে পারবেন না। তারা চান একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা গঠিত হোক। ব্যবসায়ীরা সমবায় অধিদপ্তরের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন, যেখানে তারা মার্কেট পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রদল নেতা কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।

 

এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, “বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখছি। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর