শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২   ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৮২

৪০ বছরে শিক্ষকতার ইতি টেনে ফুল সজ্জিত গাড়ি দিয়ে বিদায়

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কাদঁছেন দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকারাও, আবার কেউ গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে এ যেন অন্যরকম এক পরিবেশ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একদম নিস্তব্ধ, নিথর, সুনসান নীরবতা। সবার চোখ জলে টলমল। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিষাদের ছায়া নেমেছে পুরো স্কুল প্রাঙ্গনে। কারণ, প্রিয় শিক্ষকের বিদায় তাই বিমর্ষ, মনমরা, করুণ চাহনি চারদিকে। দেখে মনে হবে যেন কোনো রাজনৈতিক নেতা শোডাউনে বের হয়েছেন। ফুল সজ্জিত গাড়ি, সামনে মোটরসাইকেলের শোডাউন। হাত নাড়িয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ফিরছেন বাড়ি। 

বৃহস্পতিবার ( ২১ সেপ্টেম্বর)  ৪০ বছরে শিক্ষকতার জীবনের ইতি টেনে বাড়ি ফিরেছেন শিক্ষক সৈয়দ মো. আবদুল আউয়াল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অশ্রু সিক্ত চোখে বিদায় জানিয়েছেন জাতি গড়ার এই কারিগরকে। ৪০ বছর তিনি বাই সাইকেল যোগে যাতায়াত করতেন। শেষ দিনে ফিরলেন ব্যতিক্রম ভাবে।

ফুল সজ্জিত গাড়িতে বিদায়ের পূর্বে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সৈয়দ মো. আবদুল আউয়ালের ব্যক্তিত্ব ও দায়িত্বশীল শিক্ষকতার প্রশংসা করেন অতিথিবৃন্দ। বিদ্যালয়, ম্যানেজিং কমিটি, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। 

জানা যায়, আবদুল আউয়াল ১৯৬৩ সালে নাঙ্গলকোটের টুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । ১৯৮৩ সালে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁর। 

তার এই বিদায় নিয়ে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো মাসুদুল হক বলেন, তিনি আমার শিক্ষক ও দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। এমন নম্র, ভদ্র ও জ্ঞানী মানুষ খুব কমই হয়। স্যারের বিদায়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। 

বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিছ মিয়া বলেন, তিনি আমার ভালো একজন সহকর্মী ছিলেন। আমরা চেষ্টা করেছি ব্যতিক্রমী ভাবে তাকে বিদায় দিতে। তিনি খুবই ভাল মানুষ। দায়িত্বের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। তার পরবর্তী সময় গুলো ভালো কাটুক। 

বিদ্যালয় সভাপতি ডা. খায়রুল ইমরান অনি বলেন, তিনি ভাল মানুষ। দায়িত্বের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। তার পরবর্তী সময় গুলো ভালো কাটুক। 

দীর্ঘ ৪০ বছর চাকরি জীবন শেষ করে ব্যতিক্রম বিদায় অনুভূতি জানাতে গিয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আলহাজ্ব সৈয়দ মো. আবদুল আউয়াল বলেন, এটি আমার জীবনের বড় পাওয়া। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমার পরবর্তী সময়টা ভালো ভাবে কাটে। আমি আমার প্রাণ প্রিয় স্কুল এবং আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের খুব মিস করবো। সবার জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইল। 

এই বিভাগের আরো খবর