শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২   ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯৪

রিস্কা চালিয়ে স্ত্রীকে অনার্স করিয়ে স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায়

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪  

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের রিকশাচালক বিমল শব্দকর। কৃষক পুলীন শব্দকরের দুই ছেলের মধ্যে বিমল দ্বিতীয়। তার বড় ভাইও রিকশাচালক।

 

টাকার অভাবে ২০০৭ সালে এসএসসির ফরম পূরণ করতে পারেননি বিমল। এরপর শুরু তার কর্মজীবন। কুমিল্লায় প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ হয় তার।

 

২০১৭ সালে জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয়গ্রামের সমিতা শব্দকরকে বিয়ে করেন বিমল। সে সময় স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন সমিতা।

 

লেখাপড়া জানা স্ত্রী'কে বিয়ে করার পর নিজের উচ্চশিক্ষার অধরা স্বপ্নটা পূরণে আগ্রহী হন বিমল শব্দকর, কিন্তু স্বল্প বেতনের চাকরিতে এক ছেলে ও স্ত্রীর লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে আবারও রিকশা চালানো শুরু করেন বিমল।

 

এ ব্যক্তি জানান, রিকশা চালিয়ে পরিবার খরচ মিটিয়ে বাড়তি আয় দিয়ে স্ত্রীর নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যান।

 

তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর অর্থনীতি (অনার্স) ফাইনাল পরীক্ষার সময় বাচ্চার বয়স ছিল চার মাস। সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে বাবা হিসেবে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছেলের পাশে ছিলাম।’

 

তিনি জানান, পরীক্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসপাতালে ছেলের পাশে ছিলেন, যাতে স্ত্রীর পরীক্ষায় কোনো সমস্যা না হয়। এভাবে স্ত্রীকে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন স্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালোভাবে অর্থনীতিতে অনার্স পাস করে চাকরি খুঁজছেন।

 

বিমল আরও বলেন, ‘আমি পড়ালেখায় ভালো ছিলাম, কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে আর পড়া হয়নি। পড়ালেখা করার জন্য এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ ও করতে পারিনি।

 

‘আমি উচ্চশিক্ষা অর্জন না করতে পারলেও আমার স্ত্রীর মাধ্যমে এ স্বপ্ন পূরণ করেছি। এখন স্ত্রীর একটি চাকরির সুযোগ হলে দু'জনে মিলে ভালোভাবে সংসার জীবনে সন্তানদেরকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেব।’

 

বিমলের স্ত্রী সমিতা শব্দকর বলেন, ‘অর্থনীতিতে বিভাগে অনার্স পাস করার পর কম্পিউটার সাক্ষরতা কর্মসূচির কোর্স সফলভাবে শেষ করেছি, তবে কোনো চাকরির সুযোগ এখন ও হয়নি।

 

‘সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরির পরীক্ষা দিলেও কোনো চাকরির সুযোগ হয়নি। আমার এখন সরকারি বা বেসরকারি একটি চাকরি প্রয়োজন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘এত কষ্ট করে আমার স্বামী আমাকে পড়াশোনা চালিয়েছেন। যদি একটা চাকরি পাই, সেটা আমার স্বামীকে উপহার দিতে পারব।’

এই বিভাগের আরো খবর