সোমবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩২   ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

রহস্যজনক ঘাটতি: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ১.৪ লক্ষ লিটার ডিজেল কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২৫  

যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পর এবার পদ্মা এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের ডিপো থেকেও প্রায় দেড় লাখ লিটার ডিজেলের ঘাটতি পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হওয়ার পরই এই বিপুল পরিমাণ ডিজেলের হিসাবে গড়মিল দেখা দিয়েছে।

 

রাষ্ট্রীয় তেল সরবরাহকারী একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে এই ঘাটতির তথ্য জানা গেছে। বিপিসির অধীনে থাকা এই তিন কোম্পানি পরিবেশকের মাধ্যমে বাজারে তেল বিক্রি করে।

 

ঘাটতির বিস্তারিত চিত্র

 

পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আসার পর ডিপোর ট্যাংকে পরিমাপ করে এই ঘাটতি নিশ্চিত করা হয়:

 

  • মেঘনা পেট্রোলিয়াম: গত ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭২৪ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। ডিপোতে পরিমাপ করে পাওয়া যায় ২৪ লাখ ২২ হাজার ৪৭৩ লিটার। অর্থাৎ ১ লাখ ১৫ হাজার ২৫১ লিটার ডিজেলের ঘাটতি পাওয়া যায় (৪.৫% এর বেশি ক্ষতি)।

  • পদ্মা অয়েল পিএলসি: ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ২৫ লাখ ২০ হাজার ৭৭০ লিটার ডিজেল সরবরাহ করা হয়। ডিপোতে মেপে পাওয়া যায় ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৮ লিটার। অর্থাৎ ঘাটতি আসে ২৭ হাজার ৩০২ লিটার।

 

বিপিসির নিয়ম অনুযায়ী, পাইপলাইনের বাইরে তেল পরিবহনের ক্ষেত্রেও সব মিলিয়ে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি অনুমোদন করা হয়। সেই হিসাবে এই ঘাটতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।

 

 

ঘাটতির সম্ভাব্য কারণ: যা বলছেন কর্তৃপক্ষ

 

বিপিসি ও ডিপো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই ঘাটতির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যা বর্তমানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে:

 

  1. মিটারে ত্রুটি: পাইপলাইনের চট্টগ্রাম ও ঢাকা (নারায়ণগঞ্জ) উভয় প্রান্তের মিটারের হিসাবে ত্রুটি থাকতে পারে।

  2. ট্যাংকের সক্ষমতা যাচাই: তেলের পরিমাণ পরিমাপ করা হয় একটি সনাতনী রড বা 'ডিপ স্টিক' দিয়ে। ট্যাংকের গভীরতা দুই মিলিমিটার কম দেখালে প্রায় ১ হাজার ১৮০ লিটার তেল চুরি করা সম্ভব। আগে যমুনা অয়েলে ট্যাংকের সক্ষমতা নিয়ে জালিয়াতি ধরা পড়েছিল। পদ্মা ও মেঘনার ক্ষেত্রেও ট্যাংকের সক্ষমতা নতুন করে যাচাই করা হতে পারে।

  3. তাপমাত্রার প্রভাব: মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহীরুল হাসান বলেছেন, শীতে তাপমাত্রা কমায় তেলের ঘনত্ব কমে গিয়ে পরিমাপে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 

পদ্মা অয়েল পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান অবশ্য জানিয়েছেন, পাইপলাইনের দুই প্রান্তের মিটারের হিসাবে ১ হাজার ৮০০ লিটার তেল বাড়তি আছে। তিনি মনে করেন, নিয়মিত সরবরাহ শুরু হলে এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

 

 

চুরি রোধে পাইপলাইন, কিন্তু 'গায়েব' কেন?

 

তেল চুরি ও অপচয় রোধ করতেই সরকার চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণ করেছে, যার পরীক্ষামূলক সরবরাহ জুনে শুরু হয়। প্রকল্পটি শেষ করতে তিন দফা মেয়াদ বাড়াতে হয় এবং ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

 

  • যমুনার ঘটনা: গত সেপ্টেম্বরে যমুনার ফতুল্লা ডিপোতে বড় ধরনের ঘাটতি ধরা পড়ার পর তদন্তে দেখা যায়, ট্যাংকের সক্ষমতা কমিয়ে দেখানো হয়েছিল। পরে নতুন করে যাচাইয়ের পর দুটি ট্যাংকে ৭৭ হাজার ৪৯২ লিটার অতিরিক্ত ধারণক্ষমতা পাওয়া যায়।

  • ক্যাবের উদ্বেগ: কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "জাহাজ থেকে পেট্রলপাম্প পর্যন্ত তেল চুরি হয়... চুরি রোধে পাইপলাইন করা হলো। তারপরও তেল গায়েব হয় কী করে?" তিনি স্বার্থ-সংঘাতমুক্ত নাগরিকদের দিয়ে তদন্তের দাবি জানান।

 

বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, পাইপলাইন এখনো প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি হস্তান্তর হতে আরও দুই মাস লাগতে পারে। তিনি মনে করেন, পাইপলাইন চালু হওয়ায় একটি অসাধু চক্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

এই বিভাগের আরো খবর