রোববার   ১১ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২   ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪০৭

ভিপি নুরকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক সংহতি সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। পরে নুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। ছবি : এনটিভি
ভারতীয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে এক সংহতি সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় সিএএ, এনআরসি নিয়ে আন্দোলনরত ভারতের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে চলা এক সমাবেশে নুরের ওপর এ হামলা চালানো হয়। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় নুরকে বাঁচাতে গেলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা অন্যদের উপরও হামলা চালায়। এতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারাও দাবি করেছেন, তাদের পাঁচ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ভিপি নুরসহ আটজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহতরা দাবি করেন, সমাবেশ চলাকালে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন দলবল নিয়ে ডাকসুর ভিপি ও তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই সেখানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। সমাবেশে যোগ দিতে বিকেল ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা আসেন। এ সময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। কোনোরকম কথাবার্তা ছাড়াই ‘বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না’ বলেই নুরের উপর হামলা চালান মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘মূলত আমরা ডাকসুর ভোটার। ডাকসুর ভিপির কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা। তিনি কেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি।’

আপনার তো ছাত্রত্বই নেই, ডাকসুর ভোটার কিভাবে- গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমার ছাত্রত্ব রয়েছে। আপনার খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নেতাকর্মীদের হামলায় ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হয়ে আইন বিভাগের সিফাত পড়ে যান। একপর্যায়ে তারা ডাকসু ভিপি নুরুল হক, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেনসহ অন্যদের ওপর হামলা চালায়। পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

হামলার বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘রাজু ভাস্কর্যে কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। হামলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’

হামলা পরবর্তী সময়ে এক সমাবেশে ভিপি নুরুল হক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে ‘র’ ও বিজেপির এজেন্ট বলে অভিহিত করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেশের স্বার্থবিরোধী আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দিব না। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ এই স্বৈরাচার সরকার।’

হামলায় আহত আখতার হোসেন সমাবেশের সামনে বসে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের আধিপত্য কায়েম হতে দিব না। সরকারের নীরব ভূমিকার জন্য দেশ আজ অন্যের হাতে।’

নুরের বক্তব্যের জবাবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা যদি ‘র’ এর এজেন্ট হয়ে থাকি, তাহলে নুর হচ্ছে পাকিস্তানের এজেন্ট।’

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের গত শনিবার থেকে সরকারি-বেসরকারি শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ শুরু হয়। রোববার নয়াদিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেধড়ক লাঠিপেটার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে দেশটির শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা জামিয়া মিল্লিয়া ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। একই ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারতের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

এই বিভাগের আরো খবর