বৃহস্পতিবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৫

বৃষ্টিতে মাটি বসে তৈরি হয়েছিল গর্ত, সেখানেই পড়ে যায় শিশু সাজিদ

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫  

গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা একটার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েল হাট পূর্ব পাড়া গ্রামের সাজিদ নামের দুই বছরের একটি শিশু ৩০-৩৫ ফুট গভীর একটি গর্তে পড়ে যায়। রাতভর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও প্রায় ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শিশুটিকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল নয়টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

শিশু সাজিদ কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মো. রাকিবের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তানোরের পচন্দর ইউনিয়নের এই গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই কছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে পানির স্তর যাচাই করতে গর্তটি খনন করেছিলেন। খননের পর গর্তটি ভরাট করা হলেও বর্ষার কারণে মাটি বসে গিয়ে আবার গর্ত তৈরি হয় এবং সেই গর্তেই শিশুটি পড়ে যায়।

 

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তারা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করেন। প্রথমে স্থানীয় লোকজন চেষ্টা করায় কিছু মাটি গর্তে পড়ে যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হয়। ফায়ার সার্ভিস এসেই পাইপের মাধ্যমে গর্তে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করে।

সময়ক্ষেপণ: বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে খনন শুরু হয়। প্রথমে ছোট এক্সকাভেটর কাজ করলেও রাত ১০টার দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো বড় এক্সকাভেটর দিয়ে খনন শুরু হয়।

 

বিফলতা: আজ সকাল আটটার দিকে উদ্ধারকারী দল প্রায় ৩৫ ফুট গভীরে পৌঁছায় এবং মূল গর্তের পাশ কেটে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু শিশুটিকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

ধারণা: ফায়ার সার্ভিস ধারণা করছে, শিশুটি সম্ভবত আরও গভীরে চলে গেছে।

 

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান আজ সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন, উদ্ধার কাজ এখনো শেষ হয়নি এবং খনন চলছে।

 

উদ্ধারকারী দল: ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট (চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী) পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাতভর উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

জীবন রক্ষার ব্যবস্থা: ফায়ার সার্ভিস শুরু থেকেই গর্তের ভেতরে পাইপের মাধ্যমে শিশুটিকে অক্সিজেন সরবরাহ করে যাচ্ছে।

 

 নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গর্ত খননের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।

 

আজ সকাল পর্যন্তও শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। শিশুটির মা-বাবার আহাজারি এবং স্থানীয়দের উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। উদ্ধারকারী দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

এই মর্মান্তিক ঘটনায় তানোর এলাকাসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশুটির নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

আইনি ও প্রশাসনিক প্রভাব: ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় যেখানে গভীর নলকূপ খননে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেখানে গর্ত খননের বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর