সোমবার   ১২ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২   ১৪ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৫৯১

বিএনপি স‌হিংসতা কর‌লে সমু‌চিত জবাব দেব : কাদের

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০১৯  

 

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের নামে সহিংসতার চেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এখনো সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। আর সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটির নেতারা কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লে তাকে বাদ দেওয়া হবে বলেও জানান কাদের।

আজ শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন তি‌নি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। খালেদা জিয়াকে সরকার নয়, আদালত জেলে পাঠিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর মুক্তি নির্ভর করছে আদালতের ওপর। সেই আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভাঙচুর-নৈরাজ্য করেছে।

ওবায়দুল কা‌দের ব‌লেন, ‘আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা তারা (বিএনপি নেতারা) বল‌ছে। আমরা সেটা বারবার বলেছি, উনি আদালতে মামলার রায়ে দণ্ডিত, সে কারণে জেলে আছেন। আপনারা আইনি লড়াই করে তাঁকে মুক্ত করুন। এতে আমাদের সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু বিএন‌পি আদালত মানে না, আইনের শাসন মানে না, বিচার মা‌নে না, সা‌লিশ মানে না। আদালত প্রাঙ্গণে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের ওপর চাপ দিতে সেখানে তারা ভাঙচুর করেছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আদালত প্রাঙ্গণকে রণাঙ্গনে পরিণত করেছে। এরা ক্ষমতায় এলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার তা‌দের হাতে নিরাপদ নয়।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ব‌লেন, ‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, গণতান্ত্রিক পথে রাজনৈতিকভাবে আমরা মোকাবিলা করব। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন সহিংসতা সৃষ্টি করে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন; তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে আছেন। আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে সমু‌চিত জবাব দেওয়া হবে। আজকে সবাই প্রস্তুত হয়ে যান, এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, এখনো চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় সরকারকে হটানোর চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত রুখতে হ‌বে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।’

সেতুমন্ত্রী  আরো ব‌লেন, আজকে সারা বি‌শ্বে বিভিন্ন জনমত জরিপে আমাদের নেত্রী প্রশংসিত হচ্ছেন। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা। আজকে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে শেখ হাসিনা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সারা দুনিয়া তার প্রশংসা করছে।  দে‌শে এত উন্নয়ন, এত অর্জন বিএনপি এবং তার দোসররা উন্নয়ন দেখে না। তারা চোখে কালো চশমা পরেছে। কালো চশমা দিয়ে তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না। জনগণ তাদের (‌বিএন‌পি) চায় না, আন্দোলন করতে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ। এখন তাদের অবলম্বন হচ্ছে প্রেসব্রিফিং, তাদের অবলম্বন করছেন নালিশ। বিএনপি এখন বাংলাদেশে নালিশ পার্টি হয়ে গেছে। এখন দেশে ঠাঁই না পেয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছে।

অপকর্মকারীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন নেতাদের কেউ যদি একই ধরনের কাজে জড়িত হয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, মৎস্যজীবী লীগ প্রকৃত মৎসজীবীদের ওপর কোনো কর্তৃত্ব ফলাবে না। তাদের সহযোগিতা করতে হবে।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় অভিনন্দন জা‌নি‌য়ে ওবায়দুল কাদের ব‌লেন, ‘আপনা‌দের স‌ম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার মতোই। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা এসেছেন এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা আমি আমাদের নেত্রী আমাদের সকলের অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। আজকে মৎস্যজীবী লীগের সমাবেশে সম্মেলন উপলক্ষে আমি আপনাদের উপস্থিতি দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছি এবং আমরা যারা এখানে আছি, তারা অভিভূত। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি মৎস্যজীবী লীগকে আগামী দিনে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আরো শক্তিশালী করবে, আরো গতিশীল করবে, আরো প্রাণবন্ত করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে যে অভিযাত্রা, উন্নয়নের দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, আমাদের এই মুক্তির সংগ্রামের কান্ডারী শেখ হাসিনার সেই আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে। আরো ত্বরান্বিত করবে এটাই আমি আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ব‌লেন, ‘মৎস্যজীবী লীগের সত্যিকার অর্থেই মৎস্যজীবীদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব দরকার, কোনো চাঁদাবাজের দোকান আমরা শুনতে চাই না। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, ঢাকায় বসে বসে একটা কার্ড বানিয়ে, নাম কার্ড বানিয়ে জায়গায় জায়গায় দিয়ে চাঁদাবাজি করবে এমন নেতা আমাদের দরকার নেই। মৎস্যজীবী লী‌গের সবাইকে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে হবে। তারা মৎস্যজীবী লীগ কোন অর্থে ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে হবে, ব্যাকগ্রাউন্ড না জেনে এখানে বসে ক্ষমতার দাপটে নেতাগিরি করবেন, নিয়মিত বিভিন্ন অফিসে গিয়ে চাঁদাবাজি করবেন এ ধরনের লোককে বাদ দিতে হবে। দেখলাম যে মৎস্য উৎপাদনে আমরা তৃতীয় স্থানে। কাজেই এখানে একটা সুন্দর ভালো ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব দরকার,’ ব‌লেন ওবায়দুল কা‌দের।

একই সঙ্গে ওবায়দুল কাদের প্রত্যাশা করেন, মৎস্যজীবী লীগের নতুন নেতৃত্ব সংগঠনটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপ‌তিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

পরে মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হিসেবে মো. সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ আজগর লস্করের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মৎস্যসম্পদ বিকাশের এবং মৎস্যজীবীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালের ২২ মে মৎস্যজীবী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে চারটি জাতীয় সম্মেলন হলেও এত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি ছিল না মৎস্যজীবী লীগের। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এটিকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এর মধ্যে মৌখিকভাবে মৎস্যজীবী লীগ নেতাদের জানিয়েও দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। দলীয় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মৎস্যজীবী লীগ হবে আওয়ামী লীগের অষ্টম সহযোগী সংগঠন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সমমনা সংগঠন হলেও এত দিন সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। দলের নেতাদেরও এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মৎস্যজীবী লীগ সম্মেলন করে। এ জন্যই মৎস্যজীবী লীগের নেতারা এবারের সম্মেলনকেই প্রথম সম্মেলন বলছেন। ‘মাছে-ভাতে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগান সামনে রেখে এবারের মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরো খবর