বৃহস্পতিবার   ০৮ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৪ ১৪৩২   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৭২০

বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এখনো চলছে রাজার শাসন

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২০  

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এখনো রয়েছে রাজপ্রথা। শত শত বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ তিন রাজার আদেশ-নির্দেশ মেনে আসছেন। তবে রাজাদের এখন তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। স্থায়ী বাসিন্দার সনদ প্রদান, কর আদায়, সামাজিক কিছু বিচার-আচার, সালিশ-বৈঠকের মধ্যেই তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ। তবে তিন রাজার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাকমা, বোমাং ও মং তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে। বোমাং সার্কেল বান্দরবানে, চাকমা সার্কেল রাঙামাটিতে ও মং সার্কেল খাগড়াছড়িতে অবস্থিত।

চাকমা এবং মং সার্কেলের নিয়ম অনুযায়ী, রাজপরিবারের বড় ছেলে বংশপরম্পরায় রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হলেও বান্দরবানের বোমাং সার্কেলে বংশের সবচেয়ে বড় জনই রাজা হয়ে থাকেন। বর্তমানে রাঙামাটিতে চাকমা রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, বান্দরবানে বোমাং সার্কেলের রাজা কে এস প্রু আর খাগড়াছড়িতে মং রাজা হিসেবে রয়েছেন সাচিং প্রু চৌধুরী।

জানা গেছে, ১৯৭৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাঙামাটিতে দেবাশীষ রায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি চাকমা সার্কেলের ৫১তম রাজা। ১৬তম বোমাং রাজা ক্য এস প্রু মারা গেলে তার উত্তরসূরি হিসেবে উ চ প্রুকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেয় সরকার। সে থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন।

খাগড়াছড়িতে মং সার্কেলের বর্তমান রাজা সাচিং প্রু। রাজা পাইহ্লা প্রু চৌধুরী সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাকে রাজা নিযুক্ত করা হয়। তিনি মং সার্কেলের নবম রাজা। চাকমা সার্কেলে ১৭৮টি, বোমাং সার্কেলে ৯৭টি এবং মং সার্কেলে ১০০টি মৌজা রয়েছে। হেডম্যানরা প্রতিটি মৌজার প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন। প্রতিটি পাড়ায় রাজার প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন একজন করে কারবারি। রাজা হেডম্যান ও কারবারিদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আর সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ কর আদায় করে থাকেন হেডম্যান ও কারবারিরা। প্রতি বছর শীতের সময় তিন রাজা রাজপুণ্যাহের আয়োজন করে থাকেন। আর এ সময় প্রজারা তাদের জমির খাজনা প্রদান করেন। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় রাজকীয় অনুষ্ঠানমালার।

যদিও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে রাজপুণ্যাহের প্রচলন তেমন একটা নেই। তবে বান্দরবানে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় হয়ে থাকে রাজপুণ্যাহ। আর রাজপুণ্যাহে আদায় করা খাজনার শতকরা ৪২ ভাগ রাজা, ৩৭ ভাগ হেডম্যান এবং ২১ ভাগ সরকারের কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।

জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে রাজারা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিলেন। তবে পাকিস্তান আমল থেকে রাজাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের ক্ষমতা আরও কমতে থাকে। রাজারা বর্তমানে সম্মানী পেয়ে থাকেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর হেডম্যান ৫০০ এবং কারবারি ৩০০ টাকা। এ নিয়ে রাজা, হেডম্যান, কারবারিদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। বোমাং রাজা বলেন, ‘আমি রাজা হলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। সম্প্রতি এক সম্মেলনে রাজাদের জন্য একজন দেহরক্ষী ও গাড়ি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।’ তবে রাজার তেমন ক্ষমতা না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘুরতে আসা পর্যটকদের এখনো আকর্ষণ করে রাজপ্রথা এবং রাজাদের প্রাচীন ইতিহাস। তাই দেশ-বিদেশ থেকে যারাই বেড়াতে আসেন, সবাই এক নজর হলেও দেখে যান রাজবাড়ী। সম্ভব হলে দেখা করে যান রাজার সঙ্গে।

এই বিভাগের আরো খবর