বুধবার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩২   ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

দূষণ, বৃষ্টি কম ও জলবায়ু পরিবর্তন: সাগরে মিলছে না ইলিশ

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫  

কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে চলতি বছর সাগরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না, যা মৎস্যজীবীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কিছু ট্রলারে ইলিশ পাওয়া গেলেও সেগুলোর আকার অত্যন্ত ছোট; ওজন বড়জোর ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম। ট্রলারমালিক ও জেলেরা জানাচ্ছেন, গত ১০ বছরে এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। প্রাথমিকভাবে দূষণ, বৃষ্টি কমে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন গবেষকরা, তবে এ বিষয়ে এখনো বিশদ গবেষণা হয়নি।

 

 

কক্সবাজারের জেলেরা সাধারণত এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আহরণ করে থাকেন। কিন্তু এবার সাগরে জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না। যে সামান্য ইলিশ ধরা পড়ছে, সেগুলোর গড় ওজন ৪০০ গ্রামের নিচে, যা স্বাভাবিক ইলিশের আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এই পরিস্থিতিতে ট্রলারমালিক ও জেলেরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

 

 

মৎস্য ও জলবায়ু গবেষকরা এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির একাধিক সম্ভাব্য কারণ অনুমান করছেন

সাগরের পরিবেশ ও ইলিশের প্রজননক্ষেত্রে ব্যাপক দূষণ ইলিশের প্রজনন এবং বেঁচে থাকার হার কমিয়ে দিচ্ছে।

 

ইলিশ প্রজননের জন্য এবং জাটকার বেড়ে ওঠার জন্য নদী ও সাগরে নির্দিষ্ট মাত্রায় মিষ্টি জলের প্রবাহ জরুরি। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এই প্রবাহে তারতম্য ঘটছে।

 সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ইলিশের স্বাভাবিক বিচরণ পথ এবং জীবনচক্রকে প্রভাবিত করছে।

 

জেলেরা জানান, ইলিশের এই সংকটপূর্ণ অবস্থা তাঁদের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তবে এই অনুমানগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য এখনো কোনো বিশদ বা আনুষ্ঠানিক গবেষণা শুরু হয়নি।

মৎস্য ও জলবায়ু গবেষকরা সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন।

 

 যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, ইলিশের এই সংকটপূর্ণ অবস্থা নিয়ে দ্রুত বিশদ গবেষণা ও তদন্ত শুরু করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

 

কক্সবাজারের মৎস্যজীবীরা গভীর হতাশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইলিশের আকার ছোট হওয়ায় বাজারে এর মূল্যও কম পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রলার মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং বহু জেলে বেকার হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন।

দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী মাছ ইলিশের এই আকাল জাতীয় অর্থনীতিতে এবং বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের জীবিকায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ছোট আকারের ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় ভোক্তাদের কাছেও তা উচ্চমূল্যে বিক্রি হতে পারে।

 

গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন যদি এর মূল কারণ হয়, তবে এটি বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে বৃহত্তর পরিবেশগত উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। ইলিশের জীবনচক্র রক্ষা করতে দ্রুত পরিবেশ সুরক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই বিভাগের আরো খবর