শনিবার   ১০ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৯

জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সফরসঙ্গী হওয়ার স্মৃতিচারণ!

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২১  

২০০৬ সালে টানা ১ বছর বাংলাদেশে বিএনপি জামাতের দুঃশাসন এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। তারপর ২০০৭ সালে আমার ছোট ছেলে রাইসাত জন্মের ৩ মাস পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে আসি। তখন তথাকথিত মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। মাননীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কানের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ এয়ারলাইনসে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের ডোলাস এয়ারপোর্টে গেলে, ব্রিটিশ এয়ারলাইনস তাকে বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। নেত্রীকে বিপজ্জনক ব্যক্তি ঘোষণা করে। এয়ারপোর্টে নেত্রীকে বিদায় জানাতে আমরা প্রায় শতাধিক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলাম। 
.
এর ৪/৫ দিন পর নেত্রী লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। লন্ডন থেকে একমাত্র ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্স নেত্রীকে বহন করতে রাজি হওয়ায় ৭ই মে ২০০৭ তারিখের টিকেট করা হয়। তার ৪/৫ দিন পূর্বে হঠাৎ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রচার সম্পাদক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী জনাব ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, লন্ডন থেকে আমাদেরকে ফোন করে বলেন, তোমরা কে কে মাননীয় নেত্রীর বাংলাদেশে যাওয়ার সফর সঙ্গী হবে ? ইত্তেহাদের টিকেট করে আমাকে জানাও। তখন আমি আমার দুই মাসের নবজাতক বাচ্চা রেখে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি নেত্রীর সাথে যাব। 
.
ঐ সময় নেতাকর্মী সহ সবার মনে একধরণের উৎকন্ঠা ও ভয় কাজ করছিল। এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এমনভাবে ফলাও করে প্রচার করছিল যে, নেত্রীকে বহনকারী বিমান এয়ারপোর্টে নামতে দেওয়া হবে না। অথবা গ্রেফতার করে জেলহাজতে নেওয়া হবে ইত্যাদি। যার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত পারিবারিক অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তখনকার সভাপতি অধ্যাপক খালিদ হাসানের নেতৃত্বে আমি সহ ৪ জন নিউইয়র্ক থেকে এবং ওয়াশিংটন থেকে অধ্যাপক খালিদ হাসান সহ আরো ৪ জন সহ মোট ৮ জন নেত্রীর সফর সঙ্গী হই। 
.
আমি ৬ মে ২০০৭ সালে পরিবারের প্রবল আপত্তির মুখে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হই। হিথ্রো এয়ারপোর্টে নেমে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা তখনকার যুক্তরাজ্য আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় উঠি। তার বাসায় ৩/৪ ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ আমি হিথ্রো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। হিথ্রো এয়ারপোর্টের ভিআইপিতে মাননীয় সভানেত্রীর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। 
.
তখন নেত্রী কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিক নেত্রীকে প্রশ্ন করলেন 'আপনি যে দেশের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, যদি আপনাকে ঢুকতে না দেওয়া হয়, আপনাকে যদি মেরে ফেলা হয় কিংবা গ্রেফতার করা হয় ? এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন' ? তখন তার উত্তরে তিনি বলেলেন আমার জন্মভূমিতে আমি যাব। কে আমাকে বাধা দেবে ? আমার বাবার নেতৃত্বে এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার বাবা এই দেশের জন্য ২৩ বছর কারাবরণ এবং জীবন দিয়েছেন। প্রয়োজনে আমিও কারাবরণ এবং জীবন দিব। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি বেনজির ভুট্টো কিংবা অং সাং সুচি নয় যে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াব। 
.
সেদিনের সেই সাহসী উত্তরটা আমাকে রাজনীতিতে এতটা উৎসাহিত করেছে যে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ওয়াশিংটন থেকে অধ্যাপক খালিদ হাসান সাহেবে সহ সাথে তিনির স্ত্রী জাহানারা হাসান, রফিক পারভেজ ও ওমর ইসলামের সাথে বিমানের ভিতর আমার দেখা হয়। বাকি তিনজন সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, আব্দুস সামাদ আজাদ ও সোলায়মান আলী সরাসরি জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে আবুধাবী এয়ারপোর্টে ট্রানজিট প্লেনের ভিতর দেখা হয়। ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্স লন্ডন থেকে আবুধাবী এয়ারপোর্ট এ যাত্রা বিরতিতে, আমি নিজে অধ্যাপক খালিদ হাসান ও তার স্ত্রী জাহানারা হাসানসহ আমরা তিনজন নিরাপত্তা বেষ্টনী বেদ করে নেত্রীর ইশারায় ভেতরে প্রবেশ করি। নিরাপত্তা বাহিনী তিন জনের বেশী কাওকে এলাও করতে চায়নি। 
.
যুক্তরাজ্য থেকে তখন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক প্রফেসর আবুল হাশেম এবং বর্তমান সভাপতি সুলতান শরীফের নেত্রীত্বে আরো ৭/৮ জন নেত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। আবুধাবী এয়ারপোর্টে ঢুকার পর নেত্রী আমাকে বললেন 'সুলতান শরীফ ও প্রফেসর আবুল হাশেমকে ভিআইপিতে নিয়ে আসতে'। আমি সিকিউরিটিকে নেত্রীর কথা বলে তাদেরকে নিয়ে আসলাম। আমরা সবাই কিছুক্ষন বসার পর নেত্রী নামাজ পড়ার জন্য কিছু সময় আমাদের বাইরে যেতে বললেন। নামাজ শেষ হওয়ার পর আমরা ভিতরে ঢুকি। তারপর আমি ও জাহানারা হাসান নিজ হাতে নেত্রীকে ২/৩ বার চা বানিয়ে দেই। 
.
এটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যাকে নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াতে পারার চেয়ে বেশী আর কি হতে পারে ? আবুধাবী এয়ারপোর্টের ভিতর প্রায় ৪/৫ শত প্রবাসী বাংলাদেশী অপেক্ষা করছিলেন নেত্রীর সাথে দেখা করতে এবং অনেকেই নেত্রীর সফরসঙ্গী হতে। আমি বিষয়টি নেত্রীকে অবগত করার পর তিনি আবুধাবীতে বাংলাদেশের এমবেসেডরকে বললেন, তিনি যেন ওদের সাথে দেখা করার ব্যাবস্থা করেন। এমবেসেডর অপারগতা প্রকাশ করে বললেন এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি এটা এলাও করছেনা। তখন নেত্রী বললেন তুমি যেভাবে পারো ম্যানেজ করে ব্যবস্থা করো।
.
সে বারবারই নিরাপত্তা জনিত কারণ ও উপরের নির্দেশ নেই বলে অপারগতা প্রকাশ করলে, তিনি নিজেই ভিআইপি থেকে বের হয়ে হাটতে শুরু করলেন। আমরা ও তাহার সাথে হাটতে শুরু করি। এক পর্যায়ে গ্লাসের পার্টিশনের ওপারে অপেক্ষারত ৪/৫ শত বাঙ্গালীদের নেত্রী হাত নাড়িয়ে অভিনন্দন জানালে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সমগ্র আবুধাবী এয়ারপোর্ট। এখানে উল্লেখ্য যে, আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্লাই করার পূর্বে যুক্তরাস্ট্রে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে অনুরোধ করলেন, আমার মোবাইল ফোনটা রোমিং করে নিয়ে যেতে। যাতে আমি ঢাকায় নামার পর আমার কাছ থেকে ঢাকার অবস্থা জেনে তাহার পত্রিকায় নিউজ করতে পারেন। আমি যথারীতি আমার মোবাইল ফোনটি রোমিং করে নিয়ে যাই। আবুধাবী এয়ারপোর্টে মাননীয় নেত্রীর সাথে জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় মামা এবং তিনির মেয়ের জামাই মিতু মামার সাথে আমার মোবাইল ফোনে দিয়ে আলাপ করিয়ে দেই। কারন তাহারা তখন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠায় ছিলেন।
.
আবুধাবী এয়ারপোর্টে আমরা আবার ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সে নেত্রীকে নিয়ে উঠলাম। এয়ারলাইনস এর ভিতরে ঢুকে নিউইয়র্ক থেকে আমাদের সফরসঙ্গী আব্দুস সামাদ আজাদ, সোলায়মান আলী, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের সাথে দেখা হয়। প্লেন ছাড়ার প্রায় ২০/২৫মিনিট পর, প্লেনের ভেতর নেত্রী দাড়িয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। সকল যাত্রীরা দাড়িয়ে নেত্রীকে সালাম জানান। সে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য। এক পর্যায়ে এয়ারলাইন্সের কর্মীরা বিব্রত বোধ করছিল কি হচ্ছে ভিতরে। অবশেষে প্লেন ঢাকা এয়ারপোর্টে অবতরন করলে, দরজা খোলার অপেক্ষায় নেত্রীর পেছনে প্রায় ১০ মিনিট দাড়িয়েছিলাম। আমি নেত্রীর খুব কাছে ছিলাম। নেত্রী ছাড়া সবার চেহারায় এক আতংকের ছাপ। কোনো কথাবার্তা নেই, সবার মধ্যে নিরবতা। আমি এক পর্যায়ে আপাকে (নেত্রী) বললাম আমরা কি আপনাকে বিমান থেকে নামার পর ফলো করবো ? কারণ আপনাকে সিকিউরিটি ভিআইপিতে নিয়ে যাবে। আমাদেরকে সেখানে নাও যেতে দিতে পারে। তখন তিনি উত্তরে বললেন তোমরা আমাকে ফলো করার দরকার নেই। কারণ সিকিউরিটি যদি বুঝতে পারে তোমরা আমার সাথে আসছ তাহলে তোমাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে পারে। তোমরা শুধু দূর থেকে দেখবে, যদি আমার উপর কোন অন্যায়, অত্যাচার বা গ্রেপ্তার করে, তাহলে সেটা দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিবে। এবং তোমরা ব্যাগেজ লাউঞ্জে গিয়ে ব্যাগ পিক আপ করে সুধাসদনে চলে যাবে। তোমাদের জন্য বাইরে গাড়ির ব্যবস্থা করা আছে। ইনশাল্লাহ আমি বাসা ঠিকমতো পৌঁছব। তোমাদের জন্য রাতে ডিনারের ব্যবস্থা করা আছে। আমার বাসায় সবাই ডিনার করবে। আমি রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে লন্ডন থেকে খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য বাসায় বলে রেখেছিলাম। তোমাদের জন্য ইলিশ মাছ গরুর মাংস ভুনা ডাল ইত্যাদি রান্না করে রাখা আছে। 
.
নেত্রী বের হয়ে ভিআইপিতে ঢুকার পূর্বেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিলের নেতৃত্বে ৪/৫ জন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নেত্রীকে রিসিভ করে ভিআইপিতে ঢুকে পড়েন। আমরা নেত্রীর নির্দেশ মোতাবেক সোজা ব্যাগেজ লাউন্জে চলে গেলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে ৮ই মে ২০০৭ সাল সোমবার বিকাল বেলা। নেত্রী বের হওয়ার সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ লোক লাইনে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে অভিবাদন জানায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিল সমস্ত ঢাকা। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে নেত্রী প্রথমে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে চলে গেলেন। আমরা সুধাসদনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য, ৭/৮ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। তারপর আমরা নেত্রীর পিএস ড. হাছান মাহমুদকে ফোন করলাম। তিনি বললেন বাইরে লোক পাঠাবেন। কিন্তু এতো লোকের ভিড়ে কে কাকে চিনতে পারবে। একপর্যায়ে কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার আহমদের সাথে আমাদের সুধাসদনের সামনে দেখা হয়। এবং তার সহযোগিতায় আমরা সুধাসদনের ভিতরে ঢুকি। আরেকটি কথা বলা হয় নাই। আমি যখন লন্ডনে আনোয়ারুজ্জামানের  গাড়ী দিয়ে হিথ্রো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। তখন হঠাৎ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের ফোন আসে আনোয়ারুজ্জামানের মোবাইল ফোনে। তখন নানক ও মির্জা আজম ভাই বাংলাদেশ ও ভারতের কোন একটা সীমান্তে আত্মগোপন করে ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান আমার কথা বললেন নানক ভাইকে। ফারুক ভাই নেত্রীর সঙ্গী হয়ে দেশে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি আমার গাড়িতে আছেন। তখন নানক ভাই আমার সাথে কথা বলতে চাইলেন। তখন তিনি আমাকে বললেন নেত্রীকে সালাম দিতে। তিনি নেত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পান নাই। নেত্রীকে সালাম দিতে বললেন এবং নেত্রীকে রিসিভ করার জন্য লক্ষাধিক লোক ঢাকায় সমবেত করা হয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এমনভাবে অরগানাইজ করা হয়েছে যে, যাতে পুলিশ বুঝতে না পারে এতো লোকের সমাগম কিভাবে হলো। ঐদিন আবহাওয়াও বৈরী ছিল তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধা এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও এত লোকের উপস্থিতি, নেত্রীকে এবং আমাদেরকে হতভম্ব করেছিল। সুধাসদনে ঢুকার কিছু পর নেত্রী ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার থেকে বাসায় চলে আসেন। সন্ধার পরে আমাদের সুধাসদনে ডিনারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। নেত্রী নিজে আমাদের মাঝে আসেন এবং আমাদের খাবারের খোঁজ খবর নেন। আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। তাকেই বলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা।
.
ঐদিন আমাদের সফরসঙ্গী অনেকেই সুধাসদনে ঢুকতে পারেন নাই। আমি, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, আব্দুস সামাদ আজাদ ও সোলায়মান আলী সহ ৫/৭ জন মাত্র ঢুকেছিলাম। পরেরদিন আমাদের সফরসঙ্গী যারা আমাদের সাথে বাদ পড়েছিলেন, তারা ডিনারের জন্য সুধাসদনে ঢুকার সুযোগ পান। ১৪ অথবা ১৫ মে ২০০৭ সালে, বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী, তার খাদিম পাড়াস্থ বাসায় এক মিলাদের আয়োজন করেন। এই মিলাদ অনুষ্ঠানে যারা লন্ডন থেকে নেত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে এসেছেন এবং সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সহ আমাকে দাওয়াত করা হয়। ১০মে ২০০৭ তারিখ আমি ঢাকা থেকে সিলেট চলে আসি এবং সেখান থেকে ১২ তারিখ আমার গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে একটি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলের উদ্বোধন করে সম্ভবত ১৪ মে শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসায় মিলাদে অংশগ্রহন করতে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সিলেট শহরের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে আমার এক পরিচিত সাংবাদিক আমাকে ফোন করেন। আমার অবস্থান জানতে চাইলে উত্তরে আমি তাকে বলি, খাদিমপাড়ায় শফিক ভাইয়ের বাসায় মিলাদে যাচ্ছি। সে বলল মিলাদে যাবেন না, লন্ডন থেকে যারা নেত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে এসেছেন এবং সিলেট আওয়ামী লীগের যারা মিলাদে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রায় ১৫/২০ জনকে ঐ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। আপনি শফিক ভাইয়ের বাসায় না গিয়ে আত্মগোপন করেন। আমি তখন পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহ আলম ভাইয়ের বাসায় উঠি।
.
এবং রাতে আমার সিলেট শহরস্থ বাসায় না গিয়ে সোজা রাতের বাসে ১৫ই মে ২০০৭ সালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। ১৬ই মে ঢাকায় পৌঁছে সভানেত্রীর পিএস ডক্টর হাছান মাহমুদকে সিলেটে গ্রেফতারের ঘটনা অবহিত করি। এবং আমি কি করব দেশে থাকব নাকি বিদেশে চলে যাব তাহার কাছে পরামর্শ চাই। তিনি নেত্রীর সাথে আলাপ করে আমাকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করলেন। এর ঘন্টাখানিক পর ফোন করে আমাকে জানালেন ১৭ই মে সুধাসদনে বিকালে নেত্রীর সাথে দেখা করতে। এবং লন্ডনে আনোয়ারুজ্জামানকে ফোন করে নেত্রীর সফরসঙ্গী যারা সিলেটে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের পাসপোর্ট নাম্বার এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ডক্টর হাছান মাহমুদের কাছে পাঠাতে। আমি অনেকবার ফোনে চেষ্টা করে আনোয়ারুজ্জামানকে না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এর মাধ্যমে ফোনে আনোয়ারুজ্জামানের কাছে খবর পাঠাই। সিলেটে গ্রেপ্তারকৃত সবাই ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। যেহেতু তারা ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী, তাই ব্রিটিশ এমবেসীর মাধ্যমে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনার জন্য তাদের তথ্য পাঠানো হয়। পরের দিন ১৭ই মে সভানেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ছিল। ঐদিন বিকাল তিনটায় বন্ধু জসিম মাহমুদকে সাথে নিয়ে একটা ফুলের তোড়া কিনে সভানেত্রী সাথে দেখা করার জন্য সুধাসদনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সুধাসদন এর ভিতরে ঢুকে দেখি মহিলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা যুবলীগ সহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী ফুল নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে ডক্টর হাছান মাহমুদ সরাসরি সভানেত্রীর কাছে নিয়ে গেলেন। আমি নেত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি এবং তিনির কুশলাদি জানতে চাই। তখন নেত্রী আমাকে বলেন আমেরিকা থেকে জয় (নেত্রীর পুত্র) ফোন করেছিল। তার মেয়ে সুফিয়ার (নেত্রীর নাতনী) খুব জ্বর হয়েছে। তাই মনটা খারাপ। তারপর আমার কাছ থেকে সিলেটে নেতৃবৃন্দ গ্রেফতারের বিস্তারিত শুনলেন, বললেন দুই একদিনের ভিতর আমাকে আমেরিকায় চলে যেতে। এয়ারপোর্টে কোন অসুবিধা হলে ড. হাছান মাহমুদ এর মাধ্যমে তিনিকে জানাতে। তারপর আপাকে আমি অনুরোধ করলাম আমার ফুলের তোড়াটা গ্রহণ করার জন্য। তিনি গ্রহণ করলেন এবং ফটোসেশন করে বিদায় নিয়ে আমি চলে আসলাম। ছবিটা সাথে সংযুক্ত করে দিলাম এবং পরের দিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আসার সময় রাস্তায় কোন অসুবিধা হয়নি।
.
৭ই মে ২০০৭ এ জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী প্রত্যাবর্তনে গনতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে।  সেই চেতনায় আজ আমরা উজ্জীবিত। তার সাহস ও অঙ্গীকার সকলকে নিগড় ভাঙ্গার শপথে উজ্জীবিত করেছে। বাংলাদেশের আজকের গনতন্ত্র, জননেত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয়তার ফসল।

লেখক: ফারুক আহমদ
চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

এই বিভাগের আরো খবর