রোববার   ১১ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২   ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩২৭

আগস্ট ট্র্যাজেডি - মীর আবদুর রাজজাক

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২১  

আগস্ট ট্র্যাজেডি

মীর আবদুর রাজজাক 

আগস্ট মাস আসলেই মনে পড়ে
পৃথিবীর যঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের কথা,
শুধু বাংলায় নয় সারা বিশ্ব সেদিন স্তম্ভিত হয়েছিল
একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রতিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা,
একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা,
একটি দেশের জাতির জনককে হত্যা,
বিশ্ব বিহ্বল, মূক হয়েছিল সবাই,
বাঙালি জাতি সেদিন কল্পনাও করতে পারেনি 
এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে,
রক্তাক্ত হলো ৩২ নম্বরের বাড়ি
মুছে দিতে চেয়েছিল বাঙালির গৌরব আর অহংকারকে।

কি অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর? 
তা আজো জানা হলো না,
আজো জাতি জানে না এই ট্র্যাজেডির আড়ালের খবর।
জুলিয়াস সিজার, আব্রাহাম লিঙ্কন, মার্টিন লুথার কিং, মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী,  বেনজির ভুট্টো - 
এদের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল সামাজ্রবাদের পরোক্ষ কালো হাত,
সেই উদ্যত কালো হাতের থাবায় পড়েছিল বঙ্গবন্ধু, 

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা,
এখানেই সাম্রাজ্যবাদের মোড়লদের মাথা খারাপ হয়েছিল,
কিন্তু বাঙালি জাতিকে এতিম করল,
সোনার বাংলা গড়তে বাঁধা সৃষ্টি করলো।
এমন কি তাঁর  উত্তরসুরী জাতীয় চারনেতা
সৈয়দ নজরুল ইসলাম,  তাজউদ্দীন আহমেদ, 
ক্যাপটেন মনসুর আলি এবং কামরুজ্জামানকে 
জেলের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়
যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। 
এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল
শুধু দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা
বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন ঘাতকের থাবা থাকে,
এই রকম নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করেছিল যা ইতিহাসের পাতায় বিরল।

আগস্ট ট্র্যাজেডি আমাদের স্বপ্নের দুয়ারে আঘাত হানলো -
মানুষগুলো সব তোবড়ানো লাউয়ের মতো চুপসে গেল,
বদলে গেল, হতাশায় ভারাক্রান্ত হলো, স্বার্থের টানে কেউ কেউ দুরে সরে গেল, বিভ্রান্ত হলো কাছের মানুষেরা, 
১৫ আগস্ট ভোর থেকে ১৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত

৩২ নম্বরের বাড়িতে পড়ে র'লো বঙ্গবন্ধুর লাশ 
কেউ সাহস করে গেল না, কোন প্রতিবাদও হলো না,
সবাই নীরব নিস্তব্ধতায় অসার হয়ে গিয়েছিল, 
তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা 
তিনি জাতির জনক, 
তিনিই বঙ্গবন্ধু 
তাঁর জন্যে গণ-অভ্যুথান হয়েছিল
লক্ষ লক্ষ মানুষ সামরিক শাসন উপেক্ষা করে
 রাজপথে নেমে এসেছিল,
 সত্তরের নির্বাচনের সময় জয়বাংলার শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পতি হয়েছিল, 
সেদিনের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একত্রিত করেছিলেন
মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যে, 
যিনি বলেছিলেন, এদেশ স্বাধীন হলে নাম হবে বাংলাদেশ।
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ 
তাঁর বজ্রকণ্ঠ,
"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
এই কণ্ঠ সেদিন বেজে না উঠলে কি স্বাধীনতা হতো?
এখনো আমাদের ধমনিতে সেই কণ্ঠ বেজে ওঠে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বনিত হয়েছিল তাঁরই নাম
সে নামেই বাংলার আকাশে স্বাধীনতার ফুল ফুটেছিল।
সেই রক্তাক্ত রণাঙ্গনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
 অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের, 
আমরা কোনদিনই ভুলবনা। 

বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের দল 
নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত করেছিল,
তাদের বংশধরেরা আজো একই ভুমিকায় অবতীর্ণ, 
তারা বঙ্গবন্ধুকে ছাড়েনি,
জাতির ললাটে এঁকে দিল কলঙ্কের লেপন। 
যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন
তারা বাইস বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে  সম্মান প্রদর্শন করে নাই।
যে জাতি বঙ্গবন্ধু বলতে পাগল ছিল একদিন
যিনি স্বপ্ন দেখালেন স্বাধীনতার, 
সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়ে বাঙালির হাতে স্বাধীনতার গোলাপ তুলে দিলেন -
তাঁকেই হত্যা?
আমরাই বাঙালিরা তাঁকে হত্যা করলাম! 
এ দুঃখ, এ বেদনা, এ লজ্জা রাখবো কোথায়? 
 

*মীর আবদুর রাজজাক 
*প্রফেসর
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি, 
সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

 

এই বিভাগের আরো খবর