রোববার   ১১ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২   ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৭২

আওয়ামী লীগের যারা যুদ্ধ করেছেন সে তালিকা চাই : ফখরুল

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯  


আওয়ামী লীগের কারা কারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আজকে তাদের হাতেই গণতন্ত্র নিহত হয়েছে, যারা দাবি করে তাঁরাই স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র ধারকবাহক। তাঁরাই ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই দেশ শাসন করেছে। তাঁরা একে একে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। সর্বশেষ একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দেশের মানুষ সেটা অতো সহজে ভুলে যায়নি। আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, এই সরকারের মন্ত্রীরা অনেক বড় বড় কথা বলেন, আমাদেরকে বাণী দেন, উপদেশ দেন। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনার ১৯৭১ সালে কতজন বংলাদেশের রণাঙ্গনে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হিসাব চাই আমি।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, জিয়াউর রহমান ৭৫’র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জিয়াউর রহমান কোনো মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তাদের একবার চিন্তা করা উচিত। তাদের অতীতটা কী ছিল, আর জিয়াউর রহমানের ভূমিকা কী ছিল। সেদিন আপনারা পালিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য অনুপ্রেরণা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানকে আর্মির চিফ বানিয়ে সুবিধা দিয়েছিলেন। আপনি কোথায় ছিলেন তখন? আপনি কি জানেন, সেই সময় দেশ কি অবস্থায় ছিল? আপনি কি জানেন, সেই সময় মানুষ কি পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল? খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মোশতাক এবং ওই সময়ের আওয়ামী লীগের নেতারা মিলেই শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিলেন। আপনারা মামলা করে নির্যাতন করে আমাদের মুখ বন্ধ করে দিতে চান। কিন্তু এই মুখ তো বন্ধ হবার নয়। সত্য কথা সব সময় উচ্চারিত হবে।’

ভবিষ্যতে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না সংশয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকার আজ ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। দেশের সব ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এই দেশে কখনও আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না আমি জানি না। আমরা জানি, দেশে এখন দশ ভাগ মানুষও ভোটকেন্দ্রে যায় না। কারণ ভোট দেওয়ার উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে গেছে। সব জায়গায় আগের রাতেই এখন ভোট হয়ে যায়। এটা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুরু করে দিয়েছে তারা। মানুষের আস্থা এই বিচার বিভাগের প্রতি। যেখানে গেলে মানুষ মনে করে যে, একটু আশ্রয় পাবে। কিন্তু সেই আশাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। তাঁকে তাঁর প্রাপ্য জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ আজ তো বিচারবিভাগ স্বাধীন নেই। যদি এটা স্বাধীন থাকতো তাহলে আমাদের নেত্রী অনেক আগেই জামিন পেতেন।’

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমি আজকে দেশের প্রতিটি বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান জানাতে চাই, যারা এখন আছেন, উঠে দাঁড়ান আপনাদের পূর্বসূরীদের মতো। জেগে উঠুন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সবাই এগিয়ে আসুন।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে এই দেশে গুম, খুন, অন্যায়, অনাচার এবং দেশনেত্রীকে কারাগারে রাখা এই সবকিছুর জন্যই দায়ী এই অবৈধ সরকার। তাই এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। আর এর জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বা তাঁর নেতৃত্ব ছাড়া এই দেশে গণতন্ত্রের অধিকার, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা এখন আর আশা করি না যে, আইনের মাধ্যমে দেশনেত্রী মুক্তি পাবেন। এর জন্য এই স্বৈরাচার সরকারকে পতন করতে হবে।’

আন্দোলনের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমরা কৌশলে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, এই সরকারের পতন ছাড়া দেশে কোনো কিছু সম্ভব হবে না। তাই আজ হোক আর কাল হোক; এই বাংলাদেশে আন্দোলন হবে। আর এই আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এজন্য আপনারা সবাই প্রস্তুত হোন।’

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরো খবর