যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত জবি শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি
জবি প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৫:৪৯ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

যৌন নির্যাতনের দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামাণিকের পদোন্নতি সামিয়কভাবে স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল ১১টায় ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থী জোট’ ব্যানারে আব্দুল হালিম প্রামাণিকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌন নিপীড়ক হালিম প্রামাণিকের বিচার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন করেছে। তদন্ত কমিটির নামে তিন বছর ধরে এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ভূমিকায় আমরা আশ্চর্য হয়েছি।
তারা বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিখবে সেখানে আমরা শিক্ষকের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার। পাড়ার মাস্তান আর এসকল শিক্ষকদের মাঝে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই শিক্ষকের শাস্তির বদৌলতে তাকে ডিফেন্ড করছে। আমরা কোনোভাবেই ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না। আমরা জানতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে একজন যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে?
তারা হুশিয়ারি করে বলেন, তদন্ত কমিটির নামে ভিক্টিমকে অযাচিত প্রশ্ন করে আবারও নিপীড়ন করা হয়। অবিলম্বে অভিযুক্ত হালিম প্রামাণিকেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। পুনরায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে।
মানববন্ধনে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল হাসান জাহিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা মেঘলা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এইচএম তানভীর, মাহবুবুর রহমান ও লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহাদী।
জানা যায়, জবি নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামাণিক তার নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে ক্লাসে উপস্থিতি নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দেয়। ওই সময় তিনি নিজেই বিভাগটির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্বে ছিলেন। পরে ওই শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে তাকে সাময়িক ভাবে বহিস্কার করা হয়।
২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় দুই দফা তদন্তের পর ওই শিক্ষককে তিরস্কারসহ দুই বছরের জন্য পদোন্নতি পিছিয়ে দেওয়া হয়। অপরাধের সঙ্গে শাস্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার অভিযোগে ওই বছরের ৩০ এপ্রিল ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনাটি পুনঃতদন্তের অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন।
ওই সময় অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হালিমের বহিষ্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন গড়ে উঠলে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান নিজ ক্ষমতা বলে বহিষ্কার আদেশ বহাল রাখেন।
চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই শিক্ষক আট বছর যে কোনো পদোন্নতি এবং ১০ বছর প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ ছাড়া নিজ কোর্স ছাড়া পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রমাণিত হওয়ায় যে শিক্ষকের সামান্যতম শাস্তি হয়েছে, তিনি আসলেই একজন যৌন নিপীড়ক। আর একজন যৌন নিপীড়ক কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শিক্ষকতা করার সুযোগ পেতে পারেনা।