এবার ‘শেষটা দেখে ছাড়বেন’ তাবিথ
প্রকাশিত : ০৬:৪২ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে ভোটের দিন মাঝপথে ময়দান ছেড়ে দিলেও এবার ‘শেষটা দেখে ছাড়বেন’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির তরুণ এই সদস্য ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব এবং নির্বাচনের শেষটা দেখে ছাড়ব।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের ইটিআই ভবনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে তাবিথ আউয়াল আরো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বাস রেখে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তারপরও আসন্ন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় কি না, আমরা সন্দিহান। এখানে সন্দেহ শুধু আমাদের একার নয় সাধারণৱ জনগণও এই সন্দেহ করছে।’
‘জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কি না আর ভোট দিতে পারলেও তা ঠিকভাবে গণনা করা হবে কি না এ বক্তব্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি’, যোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ।
ইসির তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আজ ৩১ ডিসেম্বর ও যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। উভয়ই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। আনিসুল হকের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান আনিসুল হক। চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জয়ী হন। যদিও সেই উপনির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি।
এবারও ‘তরুণ তুর্কি’ হিসেবে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন তাবিথ আউয়াল। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন পেয়েছেন আরেক তরুণ নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক এবারই প্রথম নির্বাচনী লড়াইয়ে নামলেন। তিনিও আজ নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হওয়ার পর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- ইসি, পুলিশ এবং সরকারের প্রতি আপনাদের কোনো আস্থা নেই, তারপরও নির্বাচনে কেন এলেন?
জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘তাদের প্রতি কোনো আস্থা নেই। তবে আমরা নিজেদের এবং জনগণের প্রতি আস্থা রেখে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ, জনগণ বারবার বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছিল। সেই জনগণকে নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।’
‘অতীতে বিতর্কিত নির্বাচন হয়ে এসেছে, সেই বিতর্ক আর না বাড়িয়ে এবার ইভিএম যাতে এই নির্বাচনে ব্যবহার করা না হয় আমরা সেই দাবি জানাব। কারণ, ইভিএম নিয়ে অনেক বিতর্কের সুযোগ আছে। এখানে অনেক অপরিষ্কার জায়গা আছে।। ইভিএমের প্রযুক্তি নিয়েও আমাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনেও সংলাপ করব, কথা বলব।’
ভোটে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না জানিয়ে ধানের শীষ প্রতীক প্রত্যাশী এই মেয়র পদপ্রার্থী আরো বলেন, 'নির্বাচনে যত সমস্যা আসুক না কেন সব সমস্যা অতিক্রম করে আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব। তবে তার মানে এই নয় যে, আশঙ্কাগুলো করা হচ্ছে সেগুলো বহাল থাকলে আমরা তা মেনে নেব। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আমাদের দাবিগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তুলে ধরেছি। আশা করছি, আসন্ন নির্বাচনী সংলাপের মাধ্যমে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।'
বিগত ঢাকা সিটি নির্বাচনের পরও অনেক নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনগুলোতে আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম উল্লেখ করে তাবিথ আরো বলেন, ‘মাঠে থাকা অবস্থায় আমরা অনেক অভিযোগ করেছিলাম। সেগুলোর কোনোটি আমলে নেওয়া হয়নি। তদন্ত করা হয়নি। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচন যেটা ২৯ এবং ৩০ ডিসেম্বর হয়েছিল, সেখানেও আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম। সেখানে তো ভোট হয় নাই তাই গণনার দরকার হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনেও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে আমরা চেষ্টা করেছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করব যেন আমাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়।'
তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রতিবাদে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছিলাম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।’
আওয়ামী লীগ দাবি করছে জনগণ উন্নয়ন দেখে তাদেরকে ভোট দিবে, তাহলে বিএনপিকে জনগণ কেন ভোট দিবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য বিএনপিকে ভোট দিবে। ভয়-ভীতির মধ্যে রয়েছে। এর থেকে তারা মুক্তি চায়। ভোটের অধিকার ফেরত চায়। জনগণ বিশ্বাস করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জনগণ বিএনপিকে অর্থাৎ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।