রোববার   ০৫ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ১৯ ১৪৩২   ১২ রবিউস সানি ১৪৪৭

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা, ২১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৭:৪২ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ২১ বছর পার হলেও বিচার শেষ হয়নি। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বতর্মানে মামলাটি ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাহাঙ্গীর আলমের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে ১৬ বছর ধরে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় নথিটি একপ্রকার বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে।

নথি থেকে জানা যায়, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে অপর আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন।

আসামিদের মধ্যে ইমন কারাগারে এবং বোতল চৌধুরী পলাতক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে আছেন। অভিযোগপত্র আসার পর ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। এর পরই ২০০৩ সালে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

এরই মধ্যে আসামিরা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই রিট আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। কিন্তু গত ১৬ বছরে ওই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এ কারণে নিম্ন আদালতের বিচারক আইনগতভাবে মামলাটির বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সৈয়দ শামছুল হক বাদল।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, রাজধানীর বনানীর জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় ট্রামস ক্লাব অবস্থিত। এ ক্লাবের মালিক আসামি বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী। ওই ক্লাবে অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। বিশেষ করে নিয়মিত মদপান, নারীদের অশ্লীল নৃত্য চলত। ক্লাবের এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করেন সোহেল চৌধুরী। তিনি বনানীর মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে এ ধরনের অসামাজিক কাজ বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ক্লাবের মধ্যে সোহেল চৌধুরীর কথিত এক বান্ধবীকে নিয়ে আসামি আজিজ মোহাম্মদের তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন সোহেল।

এ দুই ঘটনার পর আজিজ মোহাম্মদ ভাই নায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দিন সোহেল চৌধুরী রাত ১টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রামস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাঁকে ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি চলে যান।

সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল চৌধুরী ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী সোহেল চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। খুনের পর পরই আদনান সিদ্দিকী হাতেনাতে ধরা পড়েন পুলিশের হাতে।