নরসিংদীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) তামান্না নুসরাত বুবলীর হয়ে বদলি (প্রক্সি) পরীক্ষা দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক তরুণী। এজন্য পরীক্ষা থেকে বুবলীকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তাঁর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ।

তামান্না নুসরাত বুবলী নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী। তাঁর দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ১৩টি পরীক্ষার একটিতেও তিনি সরাসরি অংশ নেননি। তাঁর পক্ষে একেক সময় একেকজন দিয়েছেন। আর প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে সুবিধা দিতে পরীক্ষা কেন্দ্রসহ হল পাহাড়ায় থাকতেন এমপির লোকজন। তাই ভয়ে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীরা কেউই মুখ খুলেননি। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার নরসিংদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এমপি বুবলীর পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়েন এক তরুণী।  

ওই তরুণীর নাম এশা। তিনি নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী হিসেবে দাবি করেন। তবে ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেননি। এমপি বুবলীর পরীক্ষা কিভাবে দিচ্ছেন জানতে চাইলে এশা কোনো জবাব দিতে পারেননি।

পরীক্ষা শেষে করে এশা দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে যান। ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার বিধান থাকলেও এর কিছুই করেননি নরসিংদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীর ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র ছিল না। প্রবেশপত্র নাকি হারিয়ে গেছে। তবে থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কপি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তাই আমরা চিনতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশাকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বে ছিল একজন পুলিশ সদস্য। তাই কথা বলার ফাঁকে এশা দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে অনেক পুলিশ সদস্যই কলেজে এসেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীকে ফোন করলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাঁকে পরীক্ষা থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।