শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৫ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

মশার ওষুধ আনতে বাধা উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ: মেয়র আতিক

প্রকাশিত : ০৪:৩৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

মশা নিধনে ওষুধ আনার ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা বাধা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

মশাবাহিত ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখে থাকা ঢাকার দুই মেয়রের একজন আতিক শনিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় এই অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে সবাই মশার ওষুধ কিনতে পারেন, তা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আমাদের এটা সম্ভব হচ্ছে না কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে।

“ওই মহল পুরো বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছে। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং সরকারের একটি বিজ্ঞপ্তির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওষুধ আমদানি আটকে রেখেছিল।”

এবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের ওষুধের অকার্যকারিতা ধরা পড়ে। পরে তড়িঘড়ি করে নতুন ওষুধ আনা হলেও ততদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়, মৃত্যুর সংখ্যা শত ছাড়ায়।

বাংলাদেশে যে কোনো কীটনাশক আনার ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। কেননা ওই কীটনাশকের ব্যবহার উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব তাদের।

মেয়র আতিক অভিযোগ করেন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার ‘প্রতিবন্ধকতা’ তৈরির কারণেই মশার ওষুধ আমদানিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ডেঙ্গু এবছর প্রকট আকার ধারণ করে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ মিলনায়তনে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত 'মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়' শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডেঙ্গু নিয়ে কাউকে দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “এটা নিয়ে ব্লেইম গেইম খেলে লাভ নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা পৃথিবীতেই এ ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই।

“ডেঙ্গু নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হ‌ওয়ার‌ও কিছু নেই। যেটা আমাদের হাতে আছে সেখানেই আমরা সবাই মিলে কাজ করব‌। এখন ডেঙ্গু শুধু ঢাকার নয়, সারাদেশের সমস্যা। এজন্য সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “নতুন বিকল্প কীটনাশক পাইপ লাইনে রাখতে হবে যেন জরুরি প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যায়।”

ডেঙ্গু যেহেতু সারাদেশে ছড়িয়েছে, সে কারণে এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সারাবছর ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ গ্রহণের পরামর্শ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলার ‘সক্ষমতা’ বাংলাদেশের আছে।
“এই সমস্যার সমাধান মানুষ করবে। সরকার এতে নেতৃত্ব দেবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত মানুষ দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।"

মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সব দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা।

কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওরিয়ন ফার্মার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফ হোসেন।

কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন, ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদও আলোচনা করেন।