অভিষেক ম্যাচের আগে-পরের গল্প শোনালেন মেসি
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজার সৈকত
প্রকাশিত : ০৪:১৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

গতকাল ১৬ নভেম্বর ছিল বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে লিওনেল মেসির অভিষেকের ১৫ বছর পূর্তি। ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর, মাত্র ১৬ বছর ৪ মাস ২৩ দিন বয়সে বার্সেলোনা মূল দলের হয়ে অভিষেক হয়েছিল তার। মেসি তখন খেলতেন বার্সেলোনার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। সেখান থেকে আচমকা মূল দলের হয়ে অভিষেক হওয়ার পেছনে রয়েছে অন্য একটা গল্প। স্বপ্নের অভিষেক ম্যাচের পর মেসি নিজেও ঘটিয়ে ফেলেন অভিনব এক কাণ্ড।
মেসির সেই অভিষেক ম্যাচের আগে-পরের দুটো গল্পই জানা গেল এবার। জানালেন স্বয়ং মেসি এবং সেই ম্যাচটি কাভার করা বার্সেলোনা টিভির ফুটবল প্রতিবেদক ইয়ানমে মারকেত। বর্ষপূর্তির দিনটিতে স্বাভাবিকভাবেই মেসি স্মৃতির পাতায় ভর করে ফিরে যান নিজের সেই অভিষেক ম্যাচটাতে। বার্সেলোনা টিভিতেই এক সাক্ষাৎকারে মেসি শোনালেন অভিষেক রোমাঞ্চের গল্প।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে তার আগে থেকেই আলো ছড়ানো শুরু করেন বটে। কিন্তু এতো কম বয়সেই মূল দলের হয়ে মাঠে নামার তেমন সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু ভাগ্যদেবী নিজ হাতেই যেন আশির্বাদের হাতে খুলে দেন মেসির অভিষেক দরজা। তখন ছিল আন্তর্জাতিক বিরতি। বার্সেলোনার তৎকালীন তারকা খেলোয়াড়দের সবাই নিজ নিজ জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলতে চলে যান।
বাকি যারা ছিলেন, তাদেরও বেশ কয়েকজনের চোট ছিল। ঠিক এই অবস্থাতেই ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তোর বিপক্ষে একটা প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা। তখন পোর্তোর কোচ ছিলেন হোসে মরিনহো। যিনি বর্তমানে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ। আর বার্সেলোনার কোচ ছিলেন ডাচ কিংবদন্তি ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। তো তারকা খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে যাওয়া এবং অন্যদের চোটের কারণে রাইকার্ড ম্যাচটির জন্য খেলোয়াড় সঙ্কটে পড়েন।
এই সঙ্কট দূর করতেই তিনি দলে ডাকেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বেশ কয়েকজন উদীয়মান ফুটবলারকে। মেসি ছিলেন তাদের একজন। ম্যাচের আগে অনুশীলনেই কোচ রাইকার্ডের নজর কাড়েন ছোট্ট মেসি। অবিশ্বাস্য ড্রিবলিংয়ে সতীর্থদের নাস্তানুবাদ করে ছাড়েন! চার চারজনকে কাটিয়ে একটা গোলও করেন। তা দেখে রাইকার্ড এতোটাই মুগ্ধ হন যে, অনুশীলন সেন্টারেই মেসিকে খেলানোর পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সিদ্ধান্তটা কার্যকরও করেন বার্সার ডাচ কোচ। পোর্তোর বিপক্ষে ম্যাচটির ৭৫ মিনিটে বদলি হিসেবে নামান মেসিকে। অনুশীলনের মতো ম্যাচেও কোচকে অভিভূত করেন মেসি। মাত্র ১৫ মিনিট খেলেই দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করেন দুটি। অভিষেকে পেতে পারতেন গোলও। কিন্তু সুযোগটি মিস করেন তিনি। ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন পোর্তোর বক্সে। তার সামনে ছিল শুধুই পোর্তোর গোলরক্ষক। মেসি শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় রুখে দেন পোর্তোর গোলরক্ষক।
গোল না পেলেও ছোট্ট মেসির পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ছিলেন কোচ রাইকার্ড। হয়তো মুগ্ধ ছিলেন আরও অনেকেই। কিন্তু পোর্তোর এস্তাদিও ডু দ্রাগাও স্টেডিয়ামে ১৬ বছর বয়সী লিও মেসিকে দেখে কেউ নিশ্চয় কল্পনাও করতে পারেননি, এই ছেলেটিই একদিন জয় করবেন বিশ্ব। হবেন সর্বকালের সেরাদের একজন।
সেদিন কেউ কল্পনা করতে পারুক না পারুক, মেসি ঠিকই বিশ্ব জয় করেছেন। শুধু এস্তাদিও ডু দ্রাগাও স্টেডিয়াম স্টেডিয়াম নয়, তাবত দুনিয়ার বিখ্যাত সব স্টেডিয়ামেই মেসি রেখেছেন নিজের পদচারণার ছাপ। নিজের সেই অভিষেক ম্যাচের স্মৃতিচারণা করে বার্সেলোনা টিভিতে মেসি বলেছেন, ‘ওই দিনটা ছিল আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলার স্বপ্ন পূর্ণ হয়। এটা সত্যি যে, ওই দিনটা ছিল আমার জন্য খুবই আনন্দের।’
স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি খুব খুশি ছিলাম। আবার নার্ভাসও লাগছিল। তবে মাঠে নামার পর মুহূর্তটা উপভোগ করেছি। আমার ভালো করেই মনে আছে, গোলরক্ষকের বিপক্ষে আমি দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি গোল করতে পারিনি। ম্যাচের পর রাইকার্ড (কোচ) আমার কাছে আসেন এবং বলেন যে আমি মিস করেছি।’
ম্যাচের পরে মেসির ঘটনা গল্পটা শুনিয়েছেন বার্সেলোনা টিভির সেই সাংবাদিক মারকেত, ‘অভিষেকের পরের দিন সে (মেসি) অভিষেক ম্যাচটির রিপ্লে দেখার জন্য সরাসরি আমাদের বার্সেলোনা টিভি সেন্টারে চলে আসে। আমরা তো অবাক! সে খুবই আত্ম-সমালোচক ছিল এবং গোল করতে না পারায় নিজের উপর খুবই ক্ষুব্ধ ছিল। নিশ্চিতভাবেই সে অভিষেকের ম্যাচটাতে খুবই আনন্দিত ছিল। এবং টিভি স্ক্রিনে নিজের খেলা দেখে খুবই উত্তেজিত ছিল। মজার ব্যাপার হলো, নিজের খেলা টিভিতে দেখার পর সে আমাদের ম্যাচটার একটা কপি তৈরি করে দিতে বলে।’
কোথায় কোথায় ভুল করেছেন, সেসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্যই ম্যাচটির একটা ভিডিও কপি করে দেওয়ার আবদার করেন মেসি। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে গবেষণায় এতো আগ্রহ যার, তিনি তো সাফল্য পাবেনই।