শনিবার   ১০ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বাসরের আগেই কবরে নবদম্পতি

তরুণ কন্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

রাজনের বয়স ২২, সুমাইয়ার ১৮। পারিবারিক সম্মতির পরেই আলোচনাটা জমে। ফোনালাপেই কতশত স্বপ্নের বুনন।
পাশ ফিরলেও মনে পড়ে, কথা বলতে ইচ্ছে জাগে পরস্পরের। সবই ঠিক ছিল, নির্ধারিত দিনেই সুমাইয়ার হাতকে নিজের হাতে পেলেন রাজন। আর দশটা বরের মতোই। কিন্তু, সে হাতকে যে রাজন স্থায়ী করতে পারলেন না। বলা চলে নিয়তির কাছে হেরে গেলেন।

অবশ্য এখানে রাজনের কোনো দোষ দেয়ার সুযোগও নেই। হয়তো জীবনের শেষ চেষ্টাটুকুও তিনি করেছিলেন নববধূকে বাঁচাতে। কিন্তু, পারেননি। আজীবন না পারার এই ব্যথা যাতে বইতে না হয়, সেটাও ফায়সালা করে দিলেন সৃষ্টিকর্তা। নববধূর সঙ্গে তাকেও নিজের কাছে নিয়ে নিলেন। বাসরের আগেই তাদের ঠাঁই হলো কবরে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় এভাবেই রাজন-সুমাইয়ার সঙ্গে ঝরে গেছে ১০ প্রাণ।

সুমাইয়াকে বিয়ে করে গতকাল সোমবার ফেরার পথে সন্ধ্যায় রাজনদের মাইক্রোবাস অরক্ষিত এক রেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়লে, মুহূর্তে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন এসে আধা কিলোমিটার টেনে গিয়ে থামে।

ততক্ষণে মাইক্রোবাসের চালক এবং বর-কনেসহ সব যাত্রীর দেহটা নিথরে পরিণত।

নিহতরা হলেন- সিরাজগঞ্জ সদরের উত্তর কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে বর রাজন (২২), নববধূ উল্লাপাড়া গুচ্ছগ্রামের সুমাইয়া (১৮), বরের মামাতো ভাই আলিক (১০), মাইক্রোবাসের চালক কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল এলাকার মন্টু সেখের ছেলে স্বাধীন (৩০), বরযাত্রী শহরের রামগাতি মহল্লার আব্দুল মতির ছেলে আব্দুস সামাদ (৫০), তার স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪৫), ছেলে শাকিল (২০), কালিয়া হরিপুর চুনিয়াহাটির মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভাষা সেখ (৫৫) ও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার সুরুত আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (২৫) ও নূর আলম (৩৫)।

নিহতরা উল্লাপাড়া উপজেলার গুচ্ছগ্রাম থেকে বিয়ের পর কনে নিয়ে বরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রায়পুর পশ্চিমপাড়ায় ফিরছিলেন।

নববধূ নিয়ে রওনার পরই ফোনে জানানো হয়। বাড়িতে উৎসব। সাজানো হয় বাসরঘর। কিন্তু, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই বাসরঘরের ছবি আজীবন কাঁদাবে পরিবারের সদস্যদের।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজনের বাড়িতে গিয়ে শোকের মাতম দেখা যায়। সবার দাফন শেষেও চলছে এই মাতম। একই অবস্থা নিশ্চয় সুমাইয়ার বাড়িতেও।

রায়পুর পশ্চিমপাড়ায় কথা হয় বরের ছোট বোন স্বর্ণার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা পেছনের গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ সামনে দেখলাম ট্রেন এসে রাজন ভাইদের মাইক্রোবাসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে একটার পর একটা রক্তাত্ত লাশ পড়ছে।’

‘আমাদের গোটা পরিবার শেষ। বাড়ি এসে সুসজ্জিত ভাইয়ের বাসরঘর দেখে মনকে মানাতে পারছি না। হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। কিন্তু, আমার ভাই যে আর আসবে না’, স্নেহের বোনের বুকফাটা কান্নাটা চলতেই থাকে।