কেন মিয়ানমার ফিরতে অনীহা রোহিঙ্গাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার সৈকত
প্রকাশিত : ০২:৪৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে প্রাথমিকভাবে ৩০ পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) মিয়ানমারে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। সে্ই লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি, ট্রানজিট পয়েন্ট নির্ধারণ, প্রত্যাবাসন ঘর তৈরিসহ সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
তবে শেষ মুহূর্তে এসব রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করায় তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আটকে যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাবে না সরকার।
কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেকটা শরণার্থীর মতো জীবন কাটানোর পর নিজ দেশে ফিরতে রোহিঙ্গারা কেন অনীহা দেখালেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়া আসা রোহিঙ্গারা এখনও দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা ভুলতে পারছেন না।
তাই ওই দেশের সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করে পুনরায় দেশে ফেরার ভরসা পাচ্ছেন না তারা। দেশে ফেরত গেলে আবারও তাদের দমন-পীড়নের মুখে পড়তে হবে-এমন ভয়ই কাজ করছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
এ ছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বাধা, মিয়ানমার সরকারের নির্ধারিত ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করতে বাধ্য করার শঙ্কাও কাজ করছে তাদের মধ্যে। যে কারণে মিয়ানমার ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে এ প্রসঙ্গে কথা হয় রোহিঙ্গা আব্দুস শুক্কুরের সঙ্গে। তিনি জানান, মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে যে ১৫০ রোহিঙ্গার তালিকা করা হয়েছে তাতে তার নামও রয়েছে। দেবদূতের মতো দুই শিশু কন্যাকে কেটে টুকরো টুকরো করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ধর্ষণ করার পর স্ত্রীর বুকে ৬টি গুলি করে তাকেও হত্যা করেছে তারা। সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পর ৭ দিনের চেষ্টায় বাংলাদেশে ঠাঁই পেয়েছি। দুঃসহ সেই দিনের স্মৃতি এখনও চোখে ভাসছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না।
রোহিঙ্গা নুরুল কবির বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের পরিবারের লোকজনকে মারার সঙ্গে বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আমরা ফিরে থাকবো কোথায়, খাবো কী?
এ বৈঠকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমত হন।
তবে এদিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের অনীহা এবং ক্যাম্পজুড়ে বিক্ষোভের কারণে শেষমুহূর্তে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে যায়।
