বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৩ ১৪৩২   ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা:ভোটের ওপর নির্ভর করছে নতুন বাংলাদেশ

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত : ০৯:৫৬ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না এবং তরুণদের রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং আগামীর রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

 

 

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা কোন ধরনের রাষ্ট্র প্রত্যাশা করি, তা নির্ভর করবে আসন্ন গণভোটের ফলাফলের ওপর। এই ভোটের মাধ্যমেই ঠিক হবে নতুন বাংলাদেশের চরিত্র, কাঠামো ও অগ্রযাত্রার গতিপথ।”

 

তিনি নির্বাচনকে একটি উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখুন, শত্রু হিসেবে নয়। আপনাদের মূল্যবান ভোটই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যোগ্য লোককে ভোট দিন, জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।”

 

 

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এটি শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়; এটি বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত।”

 

তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “হামলায় জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যেখানেই থাকুক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি তরুণদের ভয় পায়, তাই তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে জোর গলায় বলতে হবে—আমরা তরুণদের রক্ষা করব।”

 

 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। রায় কার্যকর ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পলাতক শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেশে ফেরাতে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে।

 

 

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকার তাঁকে ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।”

তিনি জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পরিবারের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিচ্ছে। দেশে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

 

 

ড. ইউনূস ‘জুলাই সনদ’-কে জাতির ভবিষ্যৎ পথযাত্রার ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে ইতিমধ্যে পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে, যা একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় পদক্ষেপ।

ভাষণের শেষে তিনি আবারও আহ্বান জানান, “ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনের আগের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসবমুখর করে রাখতে হবে।”