জিবিইউ-৩৯বি ক্ষেপণাস্ত্র ফেরত চাইল যুক্তরাষ্ট্র
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত : ১০:০৯ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার
গত ২৪ নভেম্বর লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়াহ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি অত্যাধুনিক, কিন্তু অবিস্ফোরিত জিবিইউ-৩৯বি (GBU-39B) ক্ষেপণাস্ত্র অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এই বিরল ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে দ্রুত লেবাননের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রটি ফেরত চেয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি, এই অস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত তথ্য ইতোমধ্যে ইরানের হাতে পৌঁছে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি বড় ধরনের সামরিক 'লজ্জা ও কৌশলগত দুর্বলতা' সৃষ্টি করেছে।
গত ২৪ নভেম্বর ইসরায়েলি হামলায় ৮টি নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ৭টি বিস্ফোরিত হলেও অষ্টম ক্ষেপণাস্ত্র, জিবিইউ-৩৯বি, অক্ষত অবস্থায় মাটিতে পড়ে। সামরিক ওয়েবসাইট 'এশিয়ান ডিফেন্স সিকিউরিটি' এই ঘটনাকে ফিউজ বা বিস্ফোরক প্রক্রিয়ায় ত্রুটির ফল বলে মন্তব্য করেছে, যা মার্কিন প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের জন্য 'বাজে দৃশ্যকল্প' তৈরি করেছে।
এই উন্নত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রটি হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে অক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকায় ওয়াশিংটন দ্রুত লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এটি ফেরত চায়। আরব গণমাধ্যম আল-মাশহাদ ও নাশরা লেবাননের সরকারি সূত্রের বরাতে এই অনুরোধ নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উদ্বেগ হলো, এই অস্ত্রের গোপন প্রযুক্তি যদি ইরান, চীন বা রাশিয়ার কাছে পৌঁছে যায়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সক্ষমতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।
জিবিইউ-৩৯বি হলো ২৫০ পাউন্ড ওজনের একটি নির্ভুল গাইডেড বোমা, যা আকারে ছোট হলেও এর প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত। এই ক্ষেপণাস্ত্র:
ডানা খুলে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
লক্ষ্যভেদে অত্যন্ত সঠিক এবং রাডার এড়ানোর সক্ষমতা রাখে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রাগারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অস্ত্রগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
'এশিয়ান ডিফেন্স সিকিউরিটি' মনে করে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য যদি ইরানের কাছে ফাঁস হয়, তবে তা দেশটির নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রমবর্ধমান ড্রোন অস্ত্রাগারের কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কেবল একটি সামরিক বিব্রতকর ঘটনা নয়, বরং একটি কৌশলগত দুর্বলতাও।
ইয়েমেনের গণমাধ্যম আল-মাসিরাহ দাবি করেছে যে, হিজবুল্লাহ বোমাটির ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক উপাদান ইতোমধ্যে ইরানের কাছে পাঠিয়েছে। তাদের তথ্যমতে, একটি বিশেষ ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমাটিকে নিরাপদ করে বিশ্লেষণের জন্য অংশগুলো আলাদা করেছে।
আল-মাসিরাহ আরও দাবি করেছে যে, ইরান এর আগেও ২০১৩ টনের ভারী জিবিইউ-৫৭ (মাদার অফ অল বোম্বস) বোমাটি অক্ষত অবস্থায় পেয়ে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন ইরান তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডে জিবিইউ-৩৯বি শ্রেণির হালকা, কিন্তু নির্ভুল প্রযুক্তির বোমা স্থাপন করতে আগ্রহী।
মার্কিন কূটনীতিকরা লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটি দ্রুত ফেরত চেয়েছেন।
আল-মাসিরাহর দাবি অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ অক্ষত বোমাটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক উপাদান ইরানের বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দিয়েছে।
অবিস্ফোরিত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রটি বর্তমানে কোথায় আছে, এবং এর প্রযুক্তিগত তথ্য সম্পূর্ণভাবে ইরানের হাতে পৌঁছেছে কিনা, তা আন্তর্জাতিক মহলে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রযুক্তি ও কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্বের ভারসাম্যে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
কৌশলগত ধাক্কা: আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের মতে, অক্ষত জিবিইউ-৩৯বি-এর প্রযুক্তি ইরানের হাতে গেলে তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক পরিকল্পনাকে দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জ করবে। এটি তাদের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব হারানোর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ইরানের সক্ষমতা বৃদ্ধি: এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইরান তাদের নিজস্ব নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তির মান আরও দ্রুত উন্নত করতে পারবে, যেমনটি তারা আরকিউ-১৭০ স্টিলথ ড্রোন থেকে প্রযুক্তি নিয়ে শাহেদ-১৬১ ড্রোন তৈরি করেছিল।
ওয়াশিংটন লেবানন এবং এই অঞ্চলের ওপর আরও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে যাতে এই প্রযুক্তির বিস্তার রোধ করা যায়।
