বৃহস্পতিবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৬ ১৪৩২   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

‘নারী জাগরণ (ক্রীড়া)’ ক্যাটাগরিতে রোকেয়া পদক পেলেন ঋতুপর্ণা

প্রকাশিত : ০৪:৪১ পিএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

গতকাল মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা-কে 'নারী জাগরণ (ক্রীড়া)' বিভাগে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর চার বিশিষ্ট নারীকে এই পদক প্রদান করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। পদক পাওয়ার পর ঋতুপর্ণা মন্তব্য করেছেন যে এই পুরস্কার দেশের নারীদের আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে।

 

 

নারীশিক্ষা ও অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী ও ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা আয়োজনের মধ্যে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। ‎রাঙ্গামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ধারাবাহিক সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের কারণেই বাংলাদেশ দল পরপর দুবার (২০২২ ও ২০২৪) সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে এবং প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় নারী ফুটবল দল এর আগে একুশে পদক পেলেও, এবার এককভাবে ঋতুপর্ণা রোকেয়া পদক পেলেন।

 

২০২১ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলা ঋতুপর্ণা লাল-সবুজ জার্সিতে ৩৩ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল। ২০২৪ সাফে তিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান অর্জন করেন এবং এ বছর জুন-জুলাইয়ে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এশিয়ান বাছাইয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ গোল করেন।

পাহাড়সম ব্যক্তিগত বাধা অতিক্রম করে এই পর্যায়ে আসা ঋতুপর্ণা পদক পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন,

 

“সব পুরস্কারই সম্মানের। তবে এটার গুরুত্বটা বেশি। যেহেতু এটা জাতীয় পুরস্কার। তবে এ পুরস্কার দেশের নারীদের আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে।”

 

তবে এমন খুশির দিনেও কিছুটা আবেগাপ্লুত ছিলেন এই ফুটবল তারকা। তিনি তাঁর প্রয়াত বাবা ও ভাইকে খুব মিস করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে (২০১৫ সালে) বাবাকে হারান ঋতুপর্ণা এবং ২০২২ সালের জুনে বিদ্যুৎস্পর্শে তাঁর ভাই পার্বণ চাকমার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, তাঁর মা ভূজোপতি চাকমা দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত।

 

তিনি তাঁর মায়ের আত্মত্যাগের কথাও স্মরণ করে বলেন,

“আজ বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। ভাইটাকেও মিস করছি। আমার মা অনেক সংগ্রাম করছেন। আমার এত দূর আসার পেছনে পুরো পরিবার, আমার টিমমেটদের অবদান অনেক।”

 

পদক প্রদান: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেগম রোকেয়া দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঋতুপর্ণা চাকমাকে 'নারী জাগরণ (ক্রীড়া)' বিভাগে রোকেয়া পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়।

 

 

ঋতুপর্ণা চাকমা দেশের নারী ফুটবল অঙ্গনের একজন আইকন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য জাতীয়ভাবে স্বীকৃত হয়েছে। তিনি বর্তমানে তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

  •  
  • সামাজিক প্রভাব: খেলাধুলার মাধ্যমে নারী জাগরণে অবদান রাখায় ঋতুপর্ণা চাকমার এই পদক প্রাপ্তি বাংলাদেশের লাখ লাখ নারীকে, বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের মেয়েদের খেলাধুলায় আসতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হতে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্পটি সামাজিক বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।

  • আইনি/প্রশাসনিক প্রভাব: সরকারের পক্ষ থেকে এমন জাতীয় পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে সরকারিভাবে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হলো, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী জাগরণের ক্ষেত্রে ক্রীড়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।