মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩২   ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

রোকেয়া পদক বিজয়ীরা জাতির: অনুপ্রেরণা প্রধান উপদেষ্টা

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত : ০৪:০৮ পিএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

গতকাল মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এবং চারজন বিশিষ্ট নারীকে রোকেয়া পদক প্রদান করেন। তিনি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীরা রোকেয়ার পথেই জাতিকে এগিয়ে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন।

 

 

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী প্রজন্ম এবং একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নারীসমাজ, যাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নারীদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সমুন্নত রাখতে হবে।

 

 

এ বছর নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার এবং নারী জাগরণে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার বিশিষ্ট নারীকে রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন:

  • নারীশিক্ষা (গবেষণা): রুভানা রাকিব

  • নারী অধিকার (শ্রম অধিকার): কল্পনা আক্তার

  • নারী জাগরণ (ক্রীড়া): ঋতুপর্ণা চাকমা

  • মানবাধিকার: নাবিলা ইদ্রিস

 

পদকপ্রাপ্তদের প্রশংসা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আজকে যে চারজন পুরস্কার পেলেন তাঁরা রোকেয়ার সেই পথে আমাদের জাতিকে এগিয়ে দিলেন। এটি আরও একটি পুরস্কার না, এটা যুগান্তকারী পুরস্কার। তাঁরা আমাদের দুনিয়ার সামনে অন্য স্তরে নিয়ে গেছেন। তাঁরা শুধু বাংলাদেশের না, তাঁরা সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেওয়া নারী।"

 

১০০ বছরেও আরেক রোকেয়া সৃষ্টি হয়নি

 

প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, "আমরা ১০০ বছর পার হলেও আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।" তিনি রোকেয়ার দিকনির্দেশনা ও স্বপ্ন আমলে আনতে না পারার কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।

তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে নারীদের কঠিন সংগ্রাম এবং সমাজের বিচ্ছিন্নতা তুলে ধরেন, যেখানে অনেক মেয়ে তাদের নামও জানতেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি রোকেয়ার বিপ্লবী চিন্তাভাবনা স্মরণ করিয়ে দেন, যা সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল।

মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন ও হলের অসঙ্গতি

 

অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক-অর্ধেক হলেও ছেলেদের হল ১৩টি আর মেয়েদের হল মাত্র ৫টি। তিনি এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মন্তব্য করেন, মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা তো আগে করতে হবে।

বক্তব্যের শেষে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে 'নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়' করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

 

সম্মাননা প্রদান: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক চারজন বিশিষ্ট নারীকে আনুষ্ঠানিকভাবে রোকেয়া পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়েছে।

  • মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে 'নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়' করার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

 

বেগম রোকেয়া দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ফলে অদূর ভবিষ্যতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক নাম পরিবর্তন কার্যকর হবে।

 

 

প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য ও ঘোষণা সমাজে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

  • সামাজিক প্রভাব: রোকেয়া পদক বিজয়ীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে "সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেওয়া নারী" হিসেবে উল্লেখ করায় সমাজে নারীর অবদানকে আরও উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হবে। একই সাথে, আরেকটি রোকেয়া সৃষ্টি না হওয়ার বিষয়ে আত্মসমালোচনা সমাজের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করবে।

  • আইনি/প্রশাসনিক প্রভাব: 'মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়'-এর নাম 'নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়' করার ঘোষণাটি লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে আরও আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে এবং এর দ্রুত বাস্তবায়নে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-সংক্রান্ত মন্তব্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।