হাড়ের অর্থনীতি জিম্মি ৬ সশস্ত্র গ্রুপের হাতে
তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১১:১৬ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয় আঞ্চলিক ৬টি সশস্ত্র গ্রুপের প্রধান আয়ের উৎস এখন চাঁদাবাজি। গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই গ্রুপগুলো বছরে অন্তত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করছে।
পাহাড়ের সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড—পরিবহন, কৃষি পণ্য, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সাধারণ জুম চাষি পর্যন্ত কেউই এই ‘টোকেন বাণিজ্য’ বা চাঁদার আওতার বাইরে নয়।
একসময় পাহাড়ে চারটি সংগঠন সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে ছয়টিতে দাঁড়িয়েছে। জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগ পার্টি এবং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
এই গ্রুপগুলো নিজেদের এলাকা ভাগ করে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যার মূল লক্ষ্য চাঁদার আধিপত্য বজায় রাখা।
অনুসন্ধানে চাঁদাবাজির কয়েকটি প্রধান খাত উঠে এসেছে:
-
পরিবহন খাত: পাহাড় থেকে সমতলে আসা প্রতিটি বাঁশ, কাঠ, কলা বা ফলের ট্রাক থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক।
-
উন্নয়ন প্রকল্প: ঠিকাদারদের কাজের মোট বাজেটের ১০% থেকে ১৫% আগাম চাঁদা দিতে হয়। এলজিইডি বা সড়ক বিভাগের কোনো কাজই সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অনুমতি (স্লিপ) ছাড়া শুরু করা যায় না।
-
ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী: স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এমনকি সরকারি চাকরিজীবীদেরও বেতনের একটি অংশ বাৎসরিক চাঁদা হিসেবে দিতে হয়।
-
পর্যটন: সম্প্রতি কেএনএফ-এর তৎপরতায় বান্দরবানে পর্যটন খাত থেকেও চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে যৌথ বাহিনীর অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং চাঁদাবাজি বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি কাটছে না।
