বুধবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩২   ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

১০-২০ টাকার লোভে আজগরা ইউনিয়নে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ

শাহরিয়ার শ্রাবণ

প্রকাশিত : ১০:৩৯ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা আজগরা ইউনিয়নে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর মামলা করতে বাধা প্রদান এবং দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাত্র ৪ লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবদুর রহীম। তিনি কৃষ্ণপুর বাজারের ব্যবসায়ী এবং ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আবদুর রহীম দীর্ঘদিন ধরেই শিশু কে ১০/২০ টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। গত রবিবার (ঘটনার দিন) শিশুটিকে আবারো প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। এ সময় শিশুটির যৌনাঙ্গে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণে সে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

পরে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বর্তমানে শিশুটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রক্তক্ষরণের কারণে সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না।

ঘটনার পর শিশুটির পরিবার থানায় মামলা করতে চাইলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল তাতে বাধা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত রহীমকে বাঁচাতে আজগরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাম মিয়ার বাড়িতে একটি গোপন সালিস বৈঠক বসানো হয়। সেখানে প্রায় ৪ লাখ টাকা জরিমানার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মেয়ে শিশুটির বাবা ঢাকায় থাকায় মামা মিজান টাকার বিনিময়ে ভুল তথ্য দিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। একারণে শিশুটির প্রকৃত বক্তব্য নেওয়া বা তার সাথে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, রহীম এলাকায় আগে থেকেই নানা অপকর্মে জড়িত থাকলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যান। সালাম মিয়ার বাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই রফাদফা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন: ১. সালাম মিয়া - সভাপতি, আজগরা ইউনিয়ন বিএনপি। ২. মজিদ - সাংগঠনিক সম্পাদক, ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি। ৩. ফখরুল মজুমদার - ৭নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা। ৪. শফি উল্লা - আজগরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা। ৫. মিজান - সাধারণ সম্পাদক, আজগরা ইউনিয়ন শ্রমিকদল। ৬. আবদুল হাই - সভাপতি, ৭নং ওয়ার্ড (কৃষ্ণপুর) বিএনপি।

এছাড়া বৈঠকে আরও কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

গুরুতর এই ফৌজদারি অপরাধকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে মীমাংসার চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সচেতন মহল এবং সাধারণ মানুষ বলছেন, "শিশুটির জীবন বিপন্ন, অথচ নেতারা টাকার বিনিময়ে ধর্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি।"

এ বিষয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা, যাতে মামলা রুজু করে অপরাধী এবং তাকে আশ্রয়দাতাদের আইনের আওতায় আনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে, রহিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে মুঠোফোনে কল দিয়ে নাম্বারটি বার বার বন্ধ পাওয়া যায়।