বুধবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩২   ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

সীমান্ত পেরিয়ে নাশকতার ছক!

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে চরম অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং ভোট বানচালের সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালাতে পারে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগ। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার তথ্য উঠে এসেছে, যা সরকারের উচ্চপর্যায়ে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতক নেতারা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন।

 

 আওয়ামী চক্রান্তের ছক: সীমান্ত ও নাশকতা

 

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচন বানচালে আওয়ামী লীগের যে অপতৎপরতার ছক উঠে এসেছে, তার মূল বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

 

  • সীমান্ত অনুপ্রবেশ: প্রতিবেশী দেশে পলাতক দলের নেতারা ৩২টি সংসদীয় আসনে অনুপ্রবেশ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পারেন।

  • সহিংসতা ও অস্ত্র: সীমান্তবর্তী আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ভারত থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে পারে।

  • সংখ্যালঘু ভোটারদের লক্ষ্য: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে তারা সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে পারে। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হতে পারে।

  • ভুয়া তথ্য ও এআই: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনা চলছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে ডিপ ফেক ভিডিও বা নকল বার্তা তৈরি করে অসত্য তথ্য প্রচার হতে পারে।

 

 নিরাপত্তা ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ

 

প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে:

 

ঝুঁকির ক্ষেত্র গোয়েন্দা তথ্য
অস্ত্র পুনরুদ্ধার ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া ৫,৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে এখনো ১,৩৪০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এছাড়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের মধ্যে ৬৫৭টি জমা পড়েনি, যা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে যেতে পারে।
সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ১০টি আসনে চরমপন্থিদের তৎপরতা আছে। পার্বত্য জেলার তিন আসনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে।
পুলিশের মনোবল জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের উপর আক্রমণের কারণে এখনো পুলিশের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। মনোবল দ্রুত চাঙা করা না গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী ৫ আগস্টের পর জামিন পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।

 

 বিশেষজ্ঞদের অভিমত

 

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন:

 

  • বদিউল আলম মজুমদার (সুজন): "নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে।"

  • আব্দুল কাইয়ুম (সাবেক আইজিপি): "পুলিশ, বিডিআর এবং সেনাবাহিনী তৎপর থাকলে তারা সফল হতে পারবে না। সব ধরনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।"

  • ড. মাহফুজুর রহমান (রাজনৈতিক বিশ্লেষক): "আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় সীমান্ত এলাকাসহ দেশের যে কোনো জায়গায় গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সশস্ত্র হামলা চালাতে পারে। খুনখারাবিও ঘটাতে পারে।"

  • অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী: সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম বাধা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্কোন্দল। এআই প্রতিরোধের কোনো প্রস্তুতি ইসির নেই।

 

 সংখ্যালঘু ভোটের প্রভাব

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৬২টি সীমান্তবর্তী আসনের মধ্যে ৩২টি আসনে সংখ্যালঘু জনসংখ্যার হার ১০ ভাগের বেশি। এই ভোটগুলোকে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসাবে গণ্য করা হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে বিরত থাকলে এসব ভোটার ভোট প্রদানে বিরত থাকতে পারেন, যা ভোটের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে পারে। গত ১১ মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে ২,৬৮৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার ৭৬ ভাগই রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে।