বাংলাদেশী কর্মী কর্তৃক অপহরণ ও খুনের ঘটনা রোধ করা না
মো: সাইফুল আলম সরকার
প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ১ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সৌদি প্রবাসীদের। সৌদিতে বাংলাদেশী কর্মী কর্তৃক বাংলাদেশী কর্মীদের অপহরণ ও খুনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এই নিয়ে প্রবাসী মহল এবং সকলের মাঝে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলাদেশী কাজ করে সৌদি আরবে। উদ্বেগ এবং কান্না জড়িত কষ্ট নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থানরত প্রবাসী এবং তাদের পরিবারবৃন্দের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধনের আয়োজন করেন।
সেখানে অনেক কষ্ট এবং দুঃখের কথা বলেন। সেই সাথে প্রবাসী মহল বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাত দফা দাবি দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো-
১. দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে সক্রিয় করুন-প্রবাসীদের সুরক্ষা ও আইনি সহায়তায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তাদের নির্দেশ দিন।
২. সৌদি প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করুন যাতে অপহরণচক্রকে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
৩. ভুক্তভোগী প্রবাসীদের জন্য আইনজীবী ও সহায়তা সেবা নিশ্চিত করা হোক।
৪. সৌদি সরকার যাদের দেশে পাঠাবে, তাদের বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করা হোক।
৫. বিদেশে দেশের বদনামকারী অপরাধীদের পাসপোর্ট বাতিল করা হোক এবং দেশে ফিরে কঠোর আইনে বিচার নিশ্চিত করা হোক।
৬. মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে যারা দেশে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে, সেই সম্পদ জব্দ করা হোক।
৭. অপহরণচক্রকে সহযোগিতা করা ব্যক্তিদের, এমনকি পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এইখানে অবস্থানরত আমরা, কেউ সাবেক সৌদি প্রবাসী, কেউ ছুটিতে আসা প্রবাসী, আবার অনেকে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য।
আমরা প্রবাসী প্রবাসেই থাকি, কয়েক মাসের জন্য দেশে আসলে পরিবারকে সময় দেই, প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদন করে আবার প্রবাসেই ফিরে যাই। আপনারা জানেন বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার হচ্ছে সৌদি আরব, সেখানে আমাদের প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলাদেশী কাজ করেন। আপনাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই, সৌদি প্রবাসীরা ভালো নেই, তাদের দিন কাটে এখন ভয়ে আতঙ্কে, দেশে থাকা তাদের পরিবার ও ভালো নেই, প্রবাসে থাকা পরিবারের সেই মানুষটির জন্য তাদের বেড়েছে দুঃচিন্তা।
প্রিয় গণমাধ্যমকর্মী কর্মী ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী কর্মী কর্তৃক বাংলাদেশী কর্মীদের অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই দুঃখের ও লজ্জার, সেই সাথে হুমকি আছে শ্রমবাজার বন্ধের।
২০১৬-১৭ সালের দিকে সৌদি আরবে প্রথম অপহরণের খবর পাওয়া যায়, এরপর আবার করোনা পরবর্তী সময়ে শুরু হলে সেগুলো তেমন একটা আলোচনায় আসেনি। কিন্তু গত ৮ মাস ধরে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে।
গত ৮ মাসে অপহরণ হয়েছে শতের অধিক বাংলাদেশী, যাদের উপর এতটা শারীরিক নির্যাতন হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এদের অনেকেই মোটা অংকের টাকা দিয়ে কোন রকম বেঁচে ফিরেছেন। কিন্তু অভাগা ২ প্রবাসী প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেননি, তারা এই অপহরণ কারীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন।
আমরা জেনেছি এই অপহরণের পিছে কাজ করছে বাংলাদেশী প্রায় ২০ টি সক্রিয় গ্রুপ, এবং প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৫-১৫ জন সদস্য।
যারা অপহরণ হয়েছেন বা মুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই সৌদি আরবের বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন,চক্রের অনেকে সদস্য গ্রেফতার হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তি কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মুক্ত করে নিয়ে আসেন।
গত ৮ মাস ধরে সৌদি প্রবাসীরা ভয়াবহ আতংকে'র মধ্যে দিন পার করছেন, দেশে তাদের স্বজনরা রয়েছেন শঙ্কায়। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেদ্দা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি দেননি, নেননি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ এছাড়া চলমান এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা দুইবার সৌদি সফরে গেলে ও তিনি ও বিশেষ কোন ভূমিকা পালন করেনি।
