বৃহস্পতিবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩২   ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

আওয়ামী লীগ আমলের লুটপাটে পঙ্গু ব্যাংক খাত, সতর্ক বিশ্লেষকরা

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১০:১১ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

দেশের ব্যাংক খাতে অতীতের নজিরবিহীন লুটপাটের ক্ষত এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। দ্রুত বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন সংকটে অর্ধেকের বেশি ব্যাংক ঝুঁকির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি নতুন সরকারের জন্য বড় অশনিসংকেত।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৩৫.৭৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এক বছর তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে আরও ৪ লাখ ৩৪ হাজার কোটি। চলতি বছরের নয় মাসেই বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।

 

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, অবলোপন, নবায়ন ও আদালতে আটকে থাকা পাওনাসহ প্রকৃত খেলাপির অঙ্ক ৪০ শতাংশের বেশি হতে পারে। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি, যা সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। মূলধন ঘাটতি ও আয়যোগ্য সম্পদ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক আর্থিক সক্ষমতা ভেঙে পড়ছে।

 

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের কারণে ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগের মতো পুঁজি নেই। ফলে নির্বাচনের পর নতুন সরকার কঠিন চাপের মুখে পড়বে।

 

সূত্র জানায়, দেশের মোট ব্যাংকের অন্তত ৫০ শতাংশ এখন অচল অবস্থায় খুঁড়িয়ে চলছে। আমানত ফেরত দেওয়া এবং নতুন আমানত সংগ্রহ—দুটোই তাদের জন্য বড় সংকট। দুর্বল ব্যাংকগুলো ১৩–১৪% পর্যন্ত উচ্চ সুদে আমানত তুলছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

 

এদিকে বিনিয়োগের আরেক বড় বাধা উচ্চ সুদের হার। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৪–১৮% হওয়ায় নতুন উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিতে পারছে না। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উভয় ক্ষেত্রেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব সংকট দ্রুত সমাধান না হলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে।