সোমবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩২   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

২৪ ঘণ্টায় বিশ্বব্যাপী ১১৮ কম্পন, বাংলাদেশে বাড়ছে ভূমিকম্প শঙ্কা

মোঃ মোসাদ্দেক হোসাইন ইমন

প্রকাশিত : ০৫:৫০ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১৮টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে ভূমিকম্প তথ্যসংগ্রাহক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট আর্থকোয়াকট্র্যাকার ডটকম। সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরের আপডেটে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।

 

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে বিশ্বজুড়ে হয়েছে ৮৫১টি, আর গত এক মাসে হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৩টি ভূমিকম্প।

 

এর আগে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে আচমকা শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। কয়েক দশকের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে প্রাণ যায় অন্তত ১০ জনের, আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। মুহূর্তেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। এর পরবর্তী ৩২ ঘণ্টায় আরও তিন দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

 

ভারত বা মিয়ানমার নয়– প্রতিটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরেই– নরসিংদীর মাধবদী, সাভারের বাইপাইল ও রাজধানীর বাড্ডায়। ঢাকার এত কাছাকাছি ভূমিকম্প হওয়ায় রাজধানীবাসীর উদ্বেগ আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সতর্কবার্তা জারি করেছে। বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, স্থগিত রাখা হয়েছে গ্যাসকূপ খনন ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর বাংলাদেশ ও আশপাশে হওয়া নানা ভূমিকম্প আগামী বড় বিপদের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবারের বড় ভূমিকম্পের পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আফটারশক হওয়া স্বাভাবিক। শনিবার সকালে ৩.৩ মাত্রার ভূকম্পন এবং সন্ধ্যায় এক সেকেন্ড ব্যবধানে হওয়া দুই দফা ভূমিকম্পকে তারা ওই আফটারশক হিসেবেই দেখছেন।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর শনিবারের দুটি ভূমিকম্প স্বাভাবিক আফটারশক। আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলাই সবচেয়ে জরুরি।

 

তিনি আরও বলেন, ঢাকার দুর্বল মাটির গঠনের কারণে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি তুলনামূলক বেশি অনুভূত হয় এবং কম্পনের স্থায়িত্বও বাড়ে।

 

পরপর চার দফা ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার মানুষরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ ভবনের ফাটল দেখে গ্রামে চলে যাওয়ার ভাবনা ভাবছেন।

 

বংশালের বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, কম্পন শুরু হতেই বাচ্চাদের নিয়ে নিচে দৌড়াই। চারপাশে পুরোনো ভবন, কোথায় নিরাপদ জায়গা? মনে হয়–একটা বড় ভূমিকম্প হলে এই এলাকায় কিছুই আর দাঁড়িয়ে থাকবে না।

 

চকবাজারের ব্যবসায়ী আরাফাত বলেন, শুক্রবারের পর থেকে ঘরেই ঘুমাতে সাহস পাচ্ছি না। ভয় হচ্ছে আবার বড় কিছু হবে।

 

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খোলা মাঠ নিশ্চিত করা, বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামো দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এম. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের নিচে তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থল। এখানে ভূমিকম্প ঠেকানো যাবে না; প্রস্তুতি বাড়ানো ছাড়া অন্য পথ নেই।

 

একই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. বদরুদ্দোজা মিয়া বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প যদি মেইন শক হয়, তাহলে আফটারশক চলবে; আর যদি ফোরশক হয়, সামনে বড় ভূমিকম্প আসতে পারে।

 

রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এ ভূমিকম্প আমাদের জন্য বড় সতর্কবার্তা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত ও অপসারণের কাজ দ্রুততর করা হচ্ছে।

 

দুর্গতদের সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জরুরি সেল চালু করেছে। সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা যাবে– ০২৫৮৮১১৬৫১ নম্বরে।